ডেস্ক নিউজ
চলার পথ যতই অন্ধকারাচ্ছন্ন, বন্ধুর কিংবা কণ্টকাকীর্ণ হোক, তাতে না থেমে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক, সব পদদলিত করে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাব, এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা। অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকব না। চিরদিন কেউ বাঁচে না। কিন্তু যেই কাজ আমরা করে গেলাম, সেই গতি যেন হারিয়ে না যায়, চলার গতি যেন অব্যাহত থাকে, বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়, সেটাই আমরা চাই।
রবিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি প্রদান আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাঁর সরকার উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তিকে টেকসই করতে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি ‘জাতীয় সরল উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি) প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণকে টেকসই করতেই এই কৌশল প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন। ২০২১ সালের ২৪ নবেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করে। উত্তরণের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় পাবে। অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ২৪ নবেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গণ্য হবে।
অনুষ্ঠানে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন লাভে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এবং ইউএসএআইডির প্রশাসকের ভিডিও বার্তা পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও বার্তাও শোনানো হয়। সাফ অনুর্ধ-১৯ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করার কৃতিত্বে অভিনন্দন জানায়।
জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশের গ্র্যাজুয়েশন প্রাপ্তি নিয়ে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেন। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রার ওপর বেশ কিছু প্রামাণ্য চিত্র, তথ্যচিত্র, উন্নয়নের ছোঁয়া লাভকারী সাধারণ জনগণের মতামতও অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাওয়া সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, যে কোন সময় আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আমি কখনও সেগুলো নিয়ে পরোয়া করি না। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি উদযাপনের অনুষ্ঠানে রবার্ট ফ্রস্টের কবিতা থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘দ্য উডস আর লাভলি, ডার্ক এ্যান্ড ডিপ, বাট আই হ্যাভ প্রমিজেস টু কিপ, এ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ, এ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি, স্বাধীনচেতা হলে অনেক বাধা আসে। আর দেশকে ভালবেসে শুধু দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যারা পথ চলে, তাদের পথ চলা কখনও সহজ হয় না। অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়। চলার পথ যতই অন্ধকারাচ্ছন্নই হোক না কেন, যত বন্ধুর হোক না কেন, যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, সেখানে আমরা থেমে থাকব না। অন্তত আমি এই প্রতিজ্ঞা করছি, থেমে থাকব না। চলার পথ যত কণ্টকাকীর্ণ হোক, যত রক্তক্ষরণ হোক, সব পদদলিত করে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে এগিয়ে যাব, এটাই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন, সেই লক্ষ্য অর্জনে এগিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন তাঁর মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন প্রজন্মই বাংলাদেশকে সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এমন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেভাবেই তাদেরকে তৈরি করতে চাই যে, ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন এই চলার গতিটা ধরে রাখতে পারে। সেই লক্ষ্যটা সামনে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিজয়ী জাতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে আমরা চলব।
নতুন প্রজন্মের কাছে নিজের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্তত আমি তাদেরকে এটুকু আহ্বান করব যে- দেশকে ভালবাসবে, মানুষকে ভালবাসবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। সেখানেই শান্তি, সেখানেই অগ্রগতি, সেখানেই উন্নতি, সেখানেই স্বস্তি। দেশকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং পরিকল্পনার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি। বলেন, চিরদিন কেউ বাঁচে না। কিন্তু যেই কাজ আমরা করে গেলাম, সেই গতি যেন হারিয়ে না যায়, চলার গতি যেন অব্যাহত থাকে, বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়, সেটাই আমরা চাই।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আরও বলেন, এই জাতীয় দলিলে উত্তরণের সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সব ধরনের দিক-নির্দেশনাসহ কার্যকর কৌশল থাকতে হবে। সম্যক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রমাণনির্ভর সময়োপযোগী কার্যকর কৌশল প্রণয়নে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবই। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের স্বীকৃতি এই স্বপ্ন বাস্তবায়নকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর ওপর অসংখ্যবার হামলার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমি জানি অনেক বুলেট, বোমা, গ্রেনেড আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। আমি কখনও সেগুলো নিয়ে পরোয়া করি না। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আর যাঁরা আমার সহযোগী, আমার সঙ্গে আছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কেননা, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য তাঁরা সকলে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সকল সহযোগী সংগঠন এবং বাংলদেশের সকল জনগণকে এবং উন্নয়ন সহযোগীদের এ জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে যে লক্ষ্য স্থির করেছিলেন সেই লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। আমরা নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম- ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। তাই তরুণ প্রজন্মকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা, যাতে তারা এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে পারে। কেননা, তারুণ্যের শক্তিকে আমরা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চাই। আমরা বিজয়ী জাতি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিশ্ব দরবারে বিজয়ী জাতি হিসেবে সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে আমরা চলব।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছিল। ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক আমাদের নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছিল। আমরা সব শর্ত পূরণ করে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি যাতে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পাই। ২০২১-এর ২৪ নবেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চূূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে এ অর্জন জাতির জন্য কৃতিত্ব ও গৌরবের বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তাঁর সরকার বিগত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ও মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। যার মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। গড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, যেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ। করোনার পূববর্তী সময়ে জিডিপি ৮ শতাংশের ওপর উঠে যাবার কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইএমএফ-এর হিসাব মতে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সম্পর্কে আরও বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেট ছিল মাত্র ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৭ গুণ বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের তুলনায় রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয় বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশ বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকের উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতা বাড়িয়েছি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা এবার ৮ গুণ বাড়িয়ে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা করেছি। এতে প্রায় এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী সুবিধাভোগী। ২০০৫ সালে দরিদ্র ও হতদরিদ্রের হার ছিল যথাক্রমে ৪০ ও ২৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা কমে বর্তমানে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৫ ও ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
করোনার মধ্যেও দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান অব্যাহত আছে-২০১০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৪শ’ কোটি ৫৪ লাখ ৬৭ হাজার ৯১১ কপি বই, প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে আসা এবং সেখান থেকে বিনামূল্যে ৩০ পদের ওষুধ প্রদান এবং ১৩ বছরে ২২ হাজার ৬৬৪ ডাক্তার এবং ৩৫ হাজারের বেশি নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ প্রদানের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি।
অতীতের বিপর্যস্ত বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি দেশের সকল গৃহহীনকে অন্তত একটি ঘর করে দেয়ার মাধ্যমে তাদের ঠিকানা গড়ে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের কর্মসূচীর কথাও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ এবং তৃণমূল পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়াতেও তাঁর সরকারের উদ্যোগও তুলে ধরেন।
করোনা শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বের মানুষের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন প্রণোদনার পাশাপাশি নগদ অর্থে টিকা কিনে বিনামূল্যে প্রদান করছে এবং করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করেছে। ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ডোজ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। আর বুস্টার ডোজ দেয়াও আমরা শুরু করেছি।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ তাঁর সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়ন পদক্ষেপের ফসল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আজকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ। এটা হঠাৎ করে আসেনি, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়েছি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি, আশু করণীয়, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করেছি এবং পরিকল্পিতভাবে এগিয়েছি।
এই অর্জন ধরে রেখে বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি জাতিসংঘ ঘোষিত এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা) তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করেছে এবং এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা) বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কেননা, ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে আমরা উচ্চ আয়ের উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে চাই। যে বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবেলা করে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে এবং আগামী প্রজন্মকে সুন্দর জীবন দিতে তাঁর সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়নের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি।