- ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার পরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা
- সারাদেশের থানাগুলোতে বেশি বেশি ধর্ষণ মামলা দায়েরের নির্দেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনেক নেতার ফোনালাপ পুলিশের সিআইডির হাতে
গাফফার খান চৌধুরী ॥ ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করার পরেও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও তাদের সমমনা সামাজিক সংগঠন জড়িত। এসব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ তাদের নেতাকর্মীদের পরিকল্পিতভাবে সারাদেশের থানাগুলোতে বেশি বেশি ধর্ষণ মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। এমন অনেক নেতার ফোনালাপ এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির হাতে। নির্দেশদাতা হিসেবে ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, ধর্ষণ ইস্যুতে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পর তাকে চাঁদে দেখা যাওয়া, পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথার প্রয়োজন, বাস চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ধানম-িতে চার ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লুকিয়ে রাখা এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা থেকে শুরু করে হেন কোন ইস্যু নেই যে গুজব ছড়ানো হয়নি।
তিনি বলছেন, এবার ধর্ষণের ক্ষেত্রেও সেই পরিকল্পনা নিয়েছে সরকারবিরোধী ও তাদের সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন। ইতোমধ্যেই ধর্ষণ ইস্যুতে নানাভাবে গুজব ছড়ানোর তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের অনেক শীর্ষ নেতার ধর্ষণ ইস্যুর বিষয়ে বেশকিছু কথোপকথনের রেকর্ড তাদের হাতে এসেছে। তাতে ওইসব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের শীর্ষ নেতারা তাদের নেতাকর্মীদের ধর্ষণ ইস্যুতে সারাদেশে পরিকল্পিতভাবে বেশি বেশি মামলা দায়ের করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে দেশে ধর্ষণ বেড়ে গেছে বলে প্রমাণ করা সহজ হয়। সেই সুযোগে ধর্ষণ ইস্যুতে সারাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পথ তৈরি করা সহজ হয়। ইতোমধ্যেই আমরা অনেককেই শনাক্ত করে ফেলেছি। তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগের সকল মাধ্যমের ওপর কড়া মনিটরিং করা হচ্ছে।
সিআইডির সাইবার সিকিউরিটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণ ইস্যুতে সাইবার মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ মনিটরিং চলছে ফেসবুকসহ সচরাচর ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপরে। নারী-শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ ইস্যুতে প্রচারিত সকল বক্তব্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সভা সমাবেশ ও ইসলামী জলসায় এসব ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তাদের প্রকাশিত বক্তব্য গভীরভাবে পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে। একাধিক গোষ্ঠী ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- করার পরেও আন্দোলন করার চেষ্টা করছে। তারা মূলত ধর্ষণ ইস্যুর আন্দোলনকে সরকার হটাও আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার সঙ্গে সরকারবিরোধী ও স্বাধীনতা বিরোধীদের যোগসূত্র থাকার তথ্য মিলেছে।
সূত্রটি বলছে, ইতোমধ্যেই ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্বাক্ষরও করেছেন। সরকারের নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে আগামী ১৬ ও ১৭ অক্টোবর নোয়াখালী অভিমুখে লংমার্চ কার্যক্রম বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ধর্ষণ ইস্যুতে বিক্ষোভ ও সভা সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। ইস্যুটিকে কোন কোন স্বার্থান্বেষী মহল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। এমন ইস্যুর সুযোগ নিয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির কোন সুযোগ দেয়া হবে না।
তিনি ধর্ষণ সংক্রান্ত অভিযোগ, মামলাসহ সবকিছুই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দ্রুততার সঙ্গে তার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দিয়েছেন। অপরাধী যেই হউক তাকে ছাড় দেয়া যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তদন্তে গাফিলতি প্রমাণিত হলে তার বিভাগীয় শাস্তির পাশাপাশি চাকরিচ্যুত করার ঘোষণাও দিয়েছেন পুলিশ প্রধান।
ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়েছে। যা এক সময় বলতে গেলে অনেকটা গণদাবিই ছিল। তারপরেও কোন গোষ্ঠী বা সামাজিক সংগঠন এসব ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রাম করলে তাতে বাধা নেই। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পরিস্থিতি বুঝে অবশ্যই সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র্যাব মহাপরিচালক পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন র্যাবের সকল সদস্যকে ধর্ষণ ইস্যুতে গুজব সৃষ্টিকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের প্রধান উপ-কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া জনকণ্ঠকে বলেন, করোনার কারণে মানুষ অধিকাংশ সময় ঘরে কাটাচ্ছেন। অতীতে দেশের সকল ইস্যুতেই গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করার চেষ্টা হয়েছে। এবারও ধর্ষণ ইস্যুতে তেমনটা করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে গুজব সৃষ্টিকারীরা। এজন্য আগাম ব্যবস্থা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে ফেসবুকসহ যেসব মাধ্যমে সাধারণত বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলোর ওপর। ভুয়া এ্যাকাউন্ট খুলে যাতে গুজব ছড়ানোর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
এলিট ফোর্স র্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক লেঃ কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম জনকণ্ঠকে বলেন, অতীত অভিজ্ঞতা থেকেই ধর্ষণ ইস্যুতেও সাইবার সার্ভিলেন্স বা মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারণ অতীতে সকল ইস্যুতেই গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল। এবার যাতে গুজব ছড়িয়ে কেউ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।