নিউজ ডেস্ক :
দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ হারাবে মন থেকে অনেকে বিশ্বাস করলেও কেউ মন থেকে বলেননি। পাছে যদি না হয়। বাংলাদেশ অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২২ রানে হারিয়ে স্বপ্নের শুরু পেয়েছে। বাংলাদেশের ৩৩০ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে ৩০৯ রান তুলতে সক্ষম হয়।
রান তাড়া করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভাগ্য ছিল। বাংলাদেশ সহজ সুযোগ ও হাফ চান্সগুলো লুফে নিতে পারেনি। তা না হলে এই ম্যাচ আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারত মাশরাফিরা। শুরুটা ভালোই করে দিয়ে গিয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করাম। ৪৯ রানে এই জুটি ভাঙে ভুল বোঝাবুঝিতে। মুশফিকুর রহিমের থ্রোতে রান আউট হন ডি কক (২৩)। এরপর মার্করাম-ডু প্লেসি দক্ষিণ আফ্রিকাকে টানতে থাকেন। মার্করামকে বোল্ড করে এ জুটি ভাঙেন সাকিব। ৫৬ বলে ৩৫ করেন মার্করাম। পরে ১৪৭ রানে ডু প্লেসিকে সরাসরি বোল্ড করে মিরাজ খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেন। তার আগে ডু প্লেসি ৫৩ বলে ৬২ রান করে দিয়ে যান।
তারপরও ম্যাচের হাল ছাড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচ কখনো বাংলাদেশের দিকে আবার কখনো দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে হেলে পড়ছিল। তবে ঠিক সময়ে পরপর দুটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মিলারকে মিরাজের ক্যাচ বানিয়েছেন মোস্তাফিজ। ভেঙেছেন ৫৫ রানের জুটি। এরপর ফন ডার ডুসেনকে বোল্ড করেছেন সাইফ। প্রথম বল পেয়েছেন নবম ওভারে। সাইফের ওপর শুরুর দিকে আস্থা পাচ্ছিলেন না অধিনায়ক। সাইফ নিজেকে প্রমাণ করলেন চতুর্থ ও ইনিংসের ৪০তম ওভারে।
উইকেটের ঘরটা তিন থেকে চারেই যাচ্ছিল না কিছুতেই। সৌম্য সরকার কঠিন একটা ক্যাচ ফেলেছেন মিড অফে। মুশফিক সহজ একটা স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। ডিপ থার্ডম্যানে বলের ফ্লাইট বুঝতে ভুল করে ক্যাচটা নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। প্রোটিয়াদের আকাশে তোলা বলগুলোও পড়ছিল নো ম্যানস ল্যান্ডে। সরাসরি স্টাম্পে লাগলে রান আউট হয়, এমন সুযোগগুলোও কাজে লাগছিল না। এই পরিস্থিতি থেকেই ম্যাচের লাগাম আবার নিজেদের মুঠোয় পুরেছে বাংলাদেশ। শেষ দিকে জেপি ডুমিনি চেষ্টা করেছিলেন বটে তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। মোস্তাফিজুর ৬৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৫৭ রান দিয়ে ২ উইকেট সাইফউদ্দিনের। সাকিব ৫০ ও মিরাজ ৪৪ রান দিয়ে যথাক্রমে ১টি করে উইকেট পেয়েছেন।
এরআগে বাংলাদেশের ৬ উইকেটে তোলা ৩৩০ রানের মঞ্চটা তৈরি করেছে সাকিব-মুশফিকের রেকর্ড জুটি। ৭৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ১৪২ রান যোগ করে দুজনে। বিশ্বকাপে যেটি বাংলাদেশের রেকর্ড জুটি। ইমরান তাহিরের বলে সাকিব নিজের জার্সি নম্বরটিকে মনে করিয়ে ৭৫ রানে ফিরেছেন। ৭৮ রান করেছেন মুশফিক। তিন অঙ্কে নিয়ে যেতে পারেননি নিজেকে। শেষে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকের জুটি বাংলাদেশকে বেশ ভালো পুঁজিই এনে দিয়েছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো তিন শ পেরোল।
শুরুটা ধীরেসুস্থেই করেছে বাংলাদেশ। ৭ ওভারেই ৫০ ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। নবম ওভারেই ছন্দ কাটল। প্রথম পরিবর্তনে এলেন আন্দিলে ফিকোয়াও। তাঁর দ্বিতীয় বলেই উইকেট রক্ ুকের কাছে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন তামিম। থামল ৬০ রানের উদ্বোধনী জুটি। ২৯ বলে ২ চারে ১৬ রান করে ফিরেছেন তামিম। পাল্টা আক্রমণে দারুণ খেলতে থাকা সৌম্য ফিরেছেন উইকেটের পেছনে ডি ককের দুর্দান্ত এক ক্যাচের শিকার হয়ে। এর আগে ৩০ বলে ৪২ করেছেন।
৭৫ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর দ্রুতই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব-মুশফিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছেন। দুজনের জুটিটা ভেঙেছে গত বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ-মুশফিকের ১৪১ রানের জুটির রেকর্ড।
সাকিব ৫৪ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন। মুশফিকের ফিফটির জন্য লেগেছে ৫২ বল। কত দ্রুততায় রান তুলেছেন এই দুজন! দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যবহার করতে হয়েছে ৭ বোলারকে। অবশ্য তাদের মূল স্ট্রাইক বোলার এনগিডি ৬ ওভার বল করেই উঠে গেছেন চোট নিয়ে আর ফেরেননি। শেষ দিকে ৩৩ বলে ৪৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। তিন চার ও একটি ছক্কা রয়েছে তাতে। ২০ বলে ২৬ এসেছে মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে। ২১ বলে ২১ রান করেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। আন্দিলে পেলুখোয়া, ক্রিস মরিস ও ইমরান তাহির পেয়েছেন ২টি করে উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব আল হাসান।