ডেস্ক নিউজ
৫০ বছরে পদার্পণ করলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের ৫০ বছরে পদার্পণ ‘পথ চলার ৫০’ শিরোনামে উদযাপন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে সংবাদ সম্মেলন, আলোচনা অনুষ্ঠান, লোগো উন্মোচন, কেক কাটা, র্যালি সহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি বলেন, স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই দূরদর্শী রাস্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে যে ক্ষেত্রগুলির উপর বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছিলেন, তার মধ্যে পর্যটন ছিল অন্যতম। জাতির পিতার হাত ধরেই বাংলাদেশে পর্যটনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু। প্রকৃতি ও মনুষ্যসৃষ্ট সকল নান্দনিক সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন’- যা এদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরো বলেন, পেরিয়ে আসা দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকাসমূহে হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, ডিউটি ফ্রি অপারেশন্স, রিসোর্ট, প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ইত্যাদি নির্মাণ করে পর্যটকদের মানসম্মত খাবার, আবাসন এবং নানাবিধ পর্যটন-সেবা প্রদান করে আসছে। দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারসহ দেশের অন্যান্য পর্যটন আকর্ষণীয় এলাকাসমূহকে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতেও বিগত বছরগুলোতে যথেষ্ট অবদান রেখেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্টদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পর্যটন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ন্যাশনাল হোটেল ও ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সটিটিউটটিও পরিচালনা করে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিবছর প্রায় ১৬০০ জন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারের অধিক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করেছে; যারা দেশে বিদেশে সুনামের সাথে কাজ করে চলেছে। দেশে পর্যটন শিল্পের প্রসারের কারণে এ খাতে দক্ষ জনশক্তির ক্রমাগত চাহিদা বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদয় নির্দেশনায় ২০১৭ সালে ন্যাশনাল হোটেল এন্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইন্সিটিউটকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে হাতে নেয়া কাজ সমাপ্তির পথে। এতে এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের দক্ষ জনশক্তির অধিকতর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
মাহবুব আলী বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়েছিল যে পর্যটন শিল্পের, সময়ের পরিক্রমায় তা শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে ধারাবাহিক উন্নয়নের মাধ্যমে বিকশিত হয়ে উন্নীত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানে। প্রধানমন্ত্রীর পর্যটনবান্ধব নীতিমালা ও কার্যক্রমের ফলে দেশের পর্যটনশিল্প এখন বিকাশের নতুন অধ্যায়ে উপনীত। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিপুলভাবে বিকশিত হচ্ছে এ খাতের বেসরকারি উদ্যোগ, যা এ শিল্পের জন্য খুবই ইতিবাচক।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পরিচালন ও সেবা প্রদানের আঙ্গিকে নানা পরিবর্তন এসেছে। যুগের চাহিদার প্রেক্ষিতে এর সেবা আধুনিকায়ন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিগত ১২ বছরে প্রায় ২৮৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পর্যটন কর্পোরেশন। এছাড়াও দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ৩৩৫ কোটি টাকার ১২টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে যার বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে নিয়োজিত অতিরিক্ত সচিব এ.এইচ.এম গোলাম কিবরিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ প্রমুখ।