ডেস্ক নিউজ
ভঙ্গুর দলকে এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক দলে পরিণত করা, ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, নিজস্ব স্যাটেলাইট, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, টানেল, রিজার্ভে রেকর্ড, টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন ।
‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’-আজ থেকে চার দশক আগে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর নির্বাসন শেষে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বিদেশ থাকায় বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। সেই থেকে এ দিনটিকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গতকাল বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক।
ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার নিরবচ্ছিন্ন দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তাঁর একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। জেল-জুলুম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাঁর পথ থেকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু- শত প্রতিকূলতায়ও হতোদ্যম হননি কখনো। বাংলার মানুষের হারিয়ে যাওয়া অধিকার পুনরুদ্ধার করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি বারবার স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেছেন, আবির্ভূত হয়েছেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা রূপে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বৈরশাসনের অবসান, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বাঙালির ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। খাদ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একাত্তরের নরঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন এবং রায় কার্যকর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্ব, যোগ্যতা, নিষ্ঠা, মেধা-মনন, দক্ষতা, সৃজনশীলতা, উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শী নেতৃত্বে এক সময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করত সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সেদিন শেখ হাসিনা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরেছিলেন বলেই ভঙ্গুর আওয়ামী লীগকে আজকে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ ’৭৫-র পর চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। জাতির পিতার হত্যার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরেই। ৪০ বছরের রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমায় ঘোর প্রতিপক্ষরাও অকপটে স্বীকার করছেন, শেখ হাসিনা একজন শুধু যোগ্য রাষ্ট্রনায়কই নন, বিশ্বের একজন অনুকরণীয় নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ঝঞ্ঝাপূর্ণ রাজনীতি মোকাবিলায় যেমন বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্মোহভাবে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন। একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে এরই মধ্যে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেছেন, সরকারের যা কিছু সাফল্য এর সবই অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অসম সাহস ও দৃঢ়চেতা মনোবলের কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যার রায় কার্যকর এবং জঙ্গিবাদ দমন করা সম্ভব হয়েছে। কঠোরহস্তে নিজ দলেও চালিয়েছেন শুদ্ধি অভিযান। একমাত্র শেখ হাসিনা নেতৃত্বে রয়েছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। দেশ বেরিয়ে এসেছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে। সবকিছু মিলিয়ে দৃঢ়ভাবেই বলা যায়, সরকার পরিচালনায় শেখ হাসিনার বিকল্প আজ আর কেউ নেই। সে কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন দল ও সরকারে শেখ হাসিনা অপরিহার্য। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, সততা, মেধা, দক্ষতা ও গুণাবলিতে সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। আপন কর্মমহিমায় হয়ে উঠেছেন নব পর্যায়ের বাংলাদেশের নতুন ইতিহাসের নির্মাতা; হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন বলেই ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। ২০০৮ সালে নির্বাচনের পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এশিয়া মহাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই তিন মেয়াদেই ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে, ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, অর্থনৈতিক মুক্তি, রিজার্ভ, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে উন্নত দেশগুলোকেও টেক্কা দিচ্ছে বাংলাদেশ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, শিক্ষা, গড় আয়ু, আমদানি, রপ্তানি, রিজার্ভ, ডলারের মান, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার এবং মাথাপিছু আয়ের মতো প্রতিটি সূচকে এখন বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় অনেক এগিয়ে। ফোর লেন, উড়ালসড়ক, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ এগিয়ে চলেছে মেগা প্রকল্প। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই ‘বটমলেস বাসকেট’-এর দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলই শুধু নয়, মানবতার অনন্য উদাহরণ। ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। সে কারণেই শেখ হাসিনা দল ও সরকারে অপরিহার্য।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস জাতির জন্য বহুল কাক্সিক্ষত ও প্রত্যাশিত ছিল। বঙ্গবন্ধুবিহীন উল্টোপথে চলা বাংলাদেশের মোড় ঘুরিয়ে নিতে এবং দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প ছিল না। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, মানবিক, অর্থনৈতিক যে অবদান রেখেছেন তা বিশ্বে বিরল।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকায় হানাহানি বন্ধ করে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন করেছেন। করোনাকালীন খুব কম দেশই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে। বঙ্গবন্ধুর নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ অনুসরণ করে বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সর্ম্পক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হেনরি কিসিঞ্জারের ‘বটমলেস বাসকেট’র দেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এখানেই শেষ নয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের গুণে ও মানবিকতায় দল ও সরকারে তাঁর জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন। দল ও দেশের জন্য তিনি অপরিহার্য সেটা বারবার প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূ-লুণ্ঠিত করে বাঙালি জাতির অস্তিত্বকে বিপন্ন করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে ঘাতক গোষ্ঠী। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমনি ক্রান্তিলগ্নে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার পবিত্র দায়িত্ব অর্পণ করা হয় জাতির পিতার কন্যার হাতে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বকে ভয় পায় ঘাতক গোষ্ঠী। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করতে না দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রিয় স্বদেশ ভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঢাকা শহর মিছিল আর স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া আর প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি লাখ লাখ মানুষের মিছিলকে গতিরোধ করতে পারেনি সেদিন। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরেবাংলানগর পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখতে সেদিন সারা দেশের মানুষের গন্তব্য ছিল রাজধানী ঢাকা। স্বাধীনতার অমর স্লোগান, ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস। জনতার কণ্ঠে বজ্রনিনাদে ঘোষিত হয়েছিল ‘হাসিনা তোমায় কথা দিলাম-পিতৃ হত্যার বদলা নেব’। ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’। ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে শেরেবাংলানগরে লাখ লাখ জনতার সংবর্ধনার জবাবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সব হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই রাসেল সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদেরকে ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘জীবনে ঝুঁকি নিতেই হয়, মৃত্যুকে ভয় করলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’
দেশে ফিরে দলকে সুসংগঠিত করে ১৯৮৩ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মার্শাল ল’র বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী ১৫ প্রগতিশীল দল নিয়ে জোট গঠন করে আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বর মাসে সামরিক সরকার তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখে। ১৯৮৫ সালের মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তাঁকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। দলে ভাঙন সত্ত্বেও সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেয় এবং জনতার বিপুল রায় পায়। প্রশংসিত হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্ব। কিন্তু সামরিক শাসক এরশাদ ওই ফল পাল্টে জাতীয় পার্টিকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। একানব্বই সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুসংগঠিত সংগঠনে পরিণত হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শেখ হাসিনা। তাঁর নেতৃত্বে বিরোধী দল সংসদ ত্যাগ করে এবং সবাই সংসদ থেকে ইস্তফা দেন। তাদের জোটে থাকা অন্যান্য দলও নির্বাচন বয়কট করে। ১৯৯৫ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ ও জোটে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। ফলে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাধ্য হয় সংসদে এই বিল পাস করতে। তিন মাসের মধ্যে এই সংসদ বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ২৩ জুন দেশের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে আওয়ামী লীগের সেই শুরু। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায়। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। আর ‘সংস্কার’ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের প্রায় সব প্রথম সারির নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন। তৃণমূল কর্মী ও তরুণ নেতারা শেখ হাসিনার প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন। তীব্র গণআন্দোলনে মুক্তি পান তিনি। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করে ২৩০ আসনে। দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর আওয়ামী লীগে ভাঙন সৃষ্টি হয়। সে সময় কে আওয়ামী লীগের হাল ধরবে তা নিয়ে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনাকে সভানেত্রী করা হয়। ওই সময়ে এর কোনো বিকল্প ছিল না।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা ধীরে ধীরে দলকে সুসংগঠিত করে ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একক কান্ডারিতে পরিণত হন। তাঁর নিজস্ব নেতৃত্ব গুণে দলীয় নেতা-কর্মী ও দেশে মানুষের মনে জায়গা করে নেন। দলকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা এবং টানা চারবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যখনই আওয়ামী লীগের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তখনই তরুণ নেতা ও ছাত্রনেতারা শেখ হাসিনার পাশে থেকেছেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালেও এ ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ৪০ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের এ পথচলা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না- ছিল কণ্টকপূর্ণ ও বিপদসংকুল। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করার অপরাধে তাঁকে বারবার ঘাতকদের হামলার শিকার ও কারা নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে ছিলেন পিতার মতোই অবিচল, দৃঢ় ও সাহসী। জনগণের ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়ে টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। সে কারণেই দল ও সরকারে তিনি অপরিহার্য হয়ে পড়েছেন। কর্মসূচি : শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী প্রতিবছর বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করলেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে দিবস পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ‘শেখ হাসিনার চার দশক : বদলে যাওয়া বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা উপ-কমিটি। দিবসটি উপলক্ষে আজ বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং ১৭ মে বিকাল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করা হবে।