ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কোনও রকম দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দুঃসময়ে কেউ সুযোগ নিলে, কোনও অভিযোগ পেলে আমি কিন্তু তাকে ছাড়বো না।’
আজ মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) গণভবনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দেশের ৬৪ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। করোনা পরিস্থিতিতে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছুটি ঘোষণার কারণে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা হচ্ছে। কৃষক, চা শ্রমিক, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি কষ্ট পাচ্ছে। তারা দৈনন্দিন কাজে যেতে পারছে না। তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের সামাজিক কর্তব্য। সেখানে ১০ টাকা কেজি চালসহ নানা সহযোগিতা করা হয়েছে। তাদের কাছে সাহায্য ও খাদ্য দ্রব্য পাঠাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, জন প্রতিনিধি সবাইকে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড অনুযায়ী তালিকা করতে হবে। সেই অনুযায়ী সবাই যাতে সাহায্য পায়। কেউ যাতে বাদ না পড়ে।’
এ সময় দেশের করোনা পরিস্থিতিতে দিনমজুর শ্রমজীবী মানুষের তালিকা করে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সাহায্য দিতে গিয়ে লোক সমাগম করতে বারণ করেছেন। দরকার হলে বাড়ির কাছে গিয়ে সাহায্য দেওয়ার নির্দেশও দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। করোনা পরিস্থিতিতে মুজিববর্ষের সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। ৭ই মার্চ এবং স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) ঘরে বসে পরার জিনিস নয়। এটা কেবল যারা রোগী দেখবেন, রোগী অ্যাটেন্ড করবেন তাদের পরতে হবে। যদি এভাবে র্যান্ডম ঘরে ঘরে সবাই পরতে থাকি…। রোগীর সেবা যারা করবেন তারাই পিপিই পাচ্ছে না, কিন্তু অনেকেই ঘরে-বাইরে এটা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর থেকে বিরত করা দরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পিপিই তাদেরই দরকার যারা করেনা আক্রান্ত রোগীর সেবা করেন। যে রোগীর সেবা করবে না তার এ পোশাকের দরকার নাই। অযথা পিপিই পরার কারও কোনও প্রয়োজনই নাই। অযথা এর অপব্যবহার করবেন না। একইসঙ্গে এগুলো ডিসপোজালের কী ব্যবস্থা আছে সেটাও আমাদের দেখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের রোগী, আইসিইউ, অপারেশন থিয়েটারে পরার মতো মানসম্মত পিপিই আমরা তৈরি করবো। কথা বলেছি, ব্যবস্থা নিয়েছি। গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীর সেবা করতে জন্য যে পিপিই ব্যবহার হবে, সেটা সাধারণ কারও ব্যবহার করার প্রয়োজনই নেই। অনেকেই দেখি পিপিই পরে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা কেন পরছেন জানি না, মনে হয় এটা ভালোভাবে প্রচার করা দরকার, সচেতনতা দরকার। ঘরে বা সাধারণ কাজ যারা করবেন তাদের পিপিই পরার প্রয়োজন নেই।’
দেশের জনগণের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্যোগ এলে তা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য সবাইকে সেইভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই। মনের জোর থাকতে হবে। অনেক দুর্যোগ আমরা মোকাবিলা করেছি। ইনশাল্লাহ এই দুর্যোগ মোকাবিলা করে যাচ্ছি এবং করে যাবো। আমরা বিজয়ী জাতি। মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। এখানেও আমরা বিজয় অর্জন করবো ইনশাল্লাহ।
করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশে দেখছি অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। রোগ সংক্রমিত হচ্ছে। সব মেরুকরণ ভেঙে যাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে ভূখণ্ডের দিক থেকে আমরা ছোট। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশাল। এ অবস্থার মধ্যে থেকেও আমরা যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এজন্য যারা কাজ করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই নিজেদের জায়গায় থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করেছেন বলেই এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
ক্রান্তিকালে এই ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ যে পরিস্থিতিটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা কেবল বাংলাদেশে নয়, সমগ্র পৃথিবী জুড়ে এই সমস্যাটা হয়েছে। এখানে ধনী-দরিদ্র, দুর্বল-শক্তিশালী, উন্নত-অনুন্নত কেউই বাদ যায়নি। সবাই এই পরিস্থিতির শিকার। কেউই বাদ যায়নি। এরকম পরিস্থিতি বোধহয় আমরা জাতীয় জীবনে আর কখনও দেখিনি। অতীতের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে শত বছরে একবার করে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এরকম একটা ধাক্কা আসে।’
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জীবন পড়ে থাকবে না, চলবে। সেদিকে লক্ষ রেখে আমাদের কাজ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তবে, এই সুরক্ষায় রাখতে গিয়ে মানুষকে কষ্ট দেওয়াটা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। করোনা থেকে জনগণকে সুরক্ষার জন্য জনকল্যাণে নির্দেশনা পালন করতে হবে। সবাইকে যার যার জায়গায় থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’