ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ-ভারত উপকূলীয় নৌপথে পণ্য পরিবহনে বেশ ভালো সাড়া মিলছে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে উপকূলীয় নৌপথে আমদানি-রপ্তানি মিলিয়ে আট হাজার ২৬৯ একক কনটেইনার পণ্য পরিবহন হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আমদানির পরিমাণ ছিল বেশি। তার মানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানিতে এই পথ ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।
বাংলাদেশ-ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট রুটে চুক্তির আওতায় প্রথম পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন হয়েছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। চলতি আগস্টে আরো দুটি পরীক্ষামূলক পরিবহনের (ট্রায়াল রান) প্রস্তুতি চলছে। ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট রুটে পণ্য পরিবহনের সঙ্গে উপকূলীয় রুটে জাহাজে পণ্য পরিবহনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। দুই পদ্ধতির পণ্য পরিবহনে বড় ধরনের পার্থক্যও রয়েছে। উপকূলীয় রুটে পণ্য পরিবহন হয় ছোট জাহাজে, সেটি সাগর পাড়ি দেয় না। আর ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তিতে বড় জাহাজে পণ্য পরিবহন হয় এবং ভারত মূলত তাদের মূল ভূখণ্ড থেকে জাহাজে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতের ‘সেভেন সিস্টারস’ রাজ্যে পণ্য নিতে চায়।
বন্দরের হিসাবে গত অর্থবছরে ভারত-চট্টগ্রাম বন্দর রুটে আট হাজার ২৬৯ একক আমদানি ও রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে। এর মধ্যে আমদানি কনটেইনারের পরিমাণ ছিল ছয় হাজার ৯০০ একক আর রপ্তানি কনটেইনার ছিল এক হাজার ৩৬৯ একক। ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট কনটেইনার পরিবহন হয়েছিল পাঁচ হাজার ২২১ একক। এর মধ্যে আমদানি ছিল চার হাজার ৩২২ একক আর রপ্তানি পণ্যের কনটেইনার ছিল ৯০০ একক। শতাংশের হিসাবে পণ্য পরিবহন বেড়েছে ৫৮ শতাংশ।
২০১৯-২০ অর্থবছরের পণ্য পরিবহন হয়েছিল তিন হাজার ৭৯৩ একক। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য পরিবহন হয়েছিল চার হাজার ২৩৭ একক কনটেইনার। অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য পরিবহন বেড়েছে দ্বিগুণ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, দুই দেশের উপকূলীয় পথে পণ্য পরিবহন হচ্ছে ক্রমাগত। এসব জাহাজ ভেড়ানো হয় চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জেটিতে। চুক্তির আওতায় আসায় দুই দেশেই জাহাজগুলো জেটিতে ভিড়তে কম মাশুল গুনতে হয়। আর পণ্য পরিবহনে সময়ও কম লাগে। আর ভাড়াও এক-তৃতীয়াংশ কম লাগে বিধায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই পথ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের সমুদ্র উপকূল ঘেঁষে সহজে ও কম খরচে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে ২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নৌ প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশের ১১টি বন্দরের মধ্যে উপকূল ঘেঁষে কোস্টাল বা উপকূলীয় ছোট জাহাজ চলাচল করবে। ভারতের বন্দরগুলো হচ্ছে চেন্নাই, পশ্চিমবঙ্গের হালদিয়া ও কলকাতা, ওড়িশার প্যারাদ্বীপ এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্নম ও কৃষ্ণপত্নম। আর বাংলাদেশের পাঁচটি বন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা, আশুগঞ্জ ও পানগাঁও। সেই চুক্তির আওতায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ চট্টগ্রাম বন্দরে নিপা পরিবহনের এমভি হারবার-১ জাহাজ দিয়ে পণ্য পরিবহনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বন্দরের হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাত্র ৯টি জাহাজ দিয়েই পণ্য পরিবহন শুরু হয়। এখন এই রুটে অর্থাৎ সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৩ ভয়েস বা ট্রিপ চলেছে।
এই রুটে সবচেয়ে বেশি ট্রিপ পরিচালনা করছে মেরিন ট্রাস্ট। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন শেখ শাহিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, তিন কারণে এই পণ্য পরিবহন বাড়ছে। সামনে আরো বাড়বে। সেগুলো হচ্ছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় কলকাতা থেকে পণ্য চট্টগ্রাম পৌঁছা, প্রতি সপ্তাহে জাহাজ সার্ভিস আর ভাড়া অনেক সাশ্রয়ী ও নিরাপদ। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ভারতের কলকাতা, হালদিয়া, ভাইজাগ, চেন্নাই ও কৃষ্ণপত্নম বন্দর থেকেই পণ্য পরিবহন বেশি করি। পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের তুলা থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কাঁচামাল আসছে। ’
শিপিং ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে কলকাতা বন্দরের দূরত্ব ৩৬১ নটিক্যাল মাইল। ১০ নটিক্যাল মাইল গতিতে এই দূরত্ব পাড়ি দিতে জাহাজের সময় লাগে দুই দিন। কিন্তু কলকাতার পণ্য শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর ঘুরে চট্টগ্রামে আসতে সময় লাগছে সাড়ে পাঁচ দিন। সরাসরি সার্ভিস না থাকায় প্রায় এক হাজার ৩০০ নটিক্যাল মাইল বাড়তি পাড়ি দিয়ে পণ্য বাংলাদেশে আনতে হচ্ছে। কলকাতা ছাড়া ভারতের বন্দরগুলো থেকে পণ্য আনতে শ্রীলঙ্কা বা সিঙ্গাপুর বন্দর হয়ে চট্টগ্রামে আসতে হচ্ছে। সেই সমস্যার সমাধানে দুই দেশ চুক্তির মাধ্যমে উপকূলীয় নৌপথে পণ্য পরিবহন শুরু করে।