ডেস্ক নিউজ
দেশে আগামী দ্ইু বছরের মধ্যে ১৩ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ২৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষতা দাঁড়াবে প্রায় ৩৫ হাজার মেগাওয়াটে। যদিও এই দুই বছরের মধ্যে উৎপাদন সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ শিল্পায়ন বা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেসব শিল্পাঞ্চলের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি হয়নি। যদিও বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, বেইজড লোড বা বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে ছোট ছোট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অবসরে পাঠানো হবে। ফলে একদিকে যেমন বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে; অন্যদিকে ছোট ছোটগুলো বন্ধ হওয়ার ফলে কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নির্মাণাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে বিস্তারিত তুলে ধরেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মাহবুব হোসেন। পিডিবির তথ্যানুযায়ী, আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে আসবে ৭টি কয়লাভিত্তিক, ৬টি তেলভিত্তিক, ১১টি এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। নির্মাণাধীন এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০২৪ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসবে। তবে অগ্রগতি কম থাকায় এর মধ্যে একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনে আসতে দেরি হতে পারে। সেটা ২০২৬ সালে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুৎ
উৎপাদন নিয়ে সরকারের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি জানান, এ ছাড়া আরও ৮টি সৌরশক্তিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। যার উৎপাদন সক্ষমতা হবে ২২৯ মেগাওয়াট। একই সঙ্গে আরও ১২টি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ চলমান আছে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অদূর ভবিষতে আরও ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ৬০০ মেগাওয়াট করে মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ৬৬০ মেগাওয়াট করে করে দুটি ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পটুয়াখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র (দ্বিতীয় পর্যায়ের), চট্টগ্রামের ৬১২ মেগাওয়াট করে দুই ইউনিটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র, বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, গজারিয়া ৬৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। অন্যদিকে জ্বালানি তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে মোংলা ইকোনমিক জোন বাগেরহাট ৯৯.৩৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ ৫৫ মেগাওয়াট দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র, চাঁদপুরের ১১৫ মেগাওয়াট ফার্নেস অয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শ্রীপুরের ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র।
এলএনজিভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ও চতুর্থ ইউনিট, খুলনার ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মিরসরাইর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জের ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপসার ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিলায়েন্সের ৭১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, সামিট মেঘনা ঘাট ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেঘনাঘাট ৫৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ময়মনসিংহে ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, ময়মনসিংহ ৩৬০ মেগাওয়াট সিসিপিপি দ্বৈত জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে উৎপাদন সক্ষমতার একটি বিরাট অংশ অলস পড়ে থাকবে কিনা এমন প্রশ্নে বিদ্যুৎ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এর মধ্যে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে চলে যাবে। কিছু তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া সরকার পরিকল্পিভাবে যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো স্থাপন করছে সেখানেও বিদ্যুতের দরকার হবে। ফলে আপাতত অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা মনে হলেও কার্যত উৎপাদিত বিদ্যুৎ দেশের কাজে ব্যবহার হবে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া মানে অর্থনৈতি গতি সঞ্চার হওয়া।
তবে এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল আলাম আমাদের সময়কে বলেন, সরকার অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রয়োজনীয় শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠেনি। তিনি বলেন, সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সঙ্গে যদি শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠে, বিদ্যুৎ ব্যবহার বৃদ্ধি পায় তবে সেটা ভালো। কিন্তু যদি বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসর পড়ে থাকে তবে সেটা মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।