ডেস্ক নিউজ
সার্বজনীন পেনশন তহবিলে নিম্ন আয়ের ও দুস্থ মানুষের চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়ায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে খসড়াটি দিয়ে এ বিষয়ে সর্বসাধারণের মতামত চাওয়া হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।
দেশের সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
খসড়া আইনের সূচনায় বলা হয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। ফলে ভবিষ্যতে বয়স্ক নাগরিক বাড়বে। এই বয়স্ক নাগরিকদের বা নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আনা প্রয়োজন।
এজন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য এই আইন করা হচ্ছে।
আইনের আওতায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এই কর্তৃপক্ষ পেনশন তহবিলের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ, পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে। এই কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। এর প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে দেশের যে কোনো জায়গায় কার্যালয় স্থাপন করতে পারবে।
একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য নিয়ে কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্য সরকার নিয়োগ করবে। তাদের চাকরির মেয়াদ ও শর্ত ঠিক হবে এই আইনের আওতায়। এই কর্তৃপক্ষ সার্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রবেশ যোগ্যতা, অনুমোদন, স্কিম পরিচালনা, পেনশন তহবিল, চাঁদা দাতার স্বার্থ রক্ষার কাজ করবে। বিভিন্ন চার্জ ও ফি নির্ধারণও করবে কর্তৃপক্ষ। হিসাব সংরক্ষণ বই এবং অন্যান্য দালিলিক কাগজপত্র প্রকাশ করবে। প্রয়োজনে সরকারের অনুমোদন নিয়ে ঋণও করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট গভর্নিং বোর্ড থাকবে। বোর্ডে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয়, ডাক বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান, বিএসইসির চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই, এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন, বিআইডব্লিউসিসিআইর সভাপতিরা এর সদস্য হবেন। এই কর্তৃপক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনা, পেনশন বিতরণ কাঠামো, আইনের প্রয়োজনীয় বিধিবিধান তৈরিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
আইনে বলা হয়েছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক এ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরাও এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আপাতত এ ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এ ব্যবস্থা স্বেচ্ছাধীন থাকবে।
ধারাবাহিকভাবে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ সাপেক্ষে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রতিটি নাগরিকের জন্য আলাদা আলাদা হিসাব থাকবে। এতে প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। তবে এক্ষেত্রে কর্মী বা প্রতিষ্ঠানের চাঁদা জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
মাসিক সর্বনিম্ন চাঁদার হার নির্ধারিত থাকবে। যেসব নাগরিক দরিদ্র ও দুস্থ তাদেরও পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। এ ধরনের নাগরিকদের চাঁদা সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় পরিশোধ করবে। প্রবাসী কর্মীদের সুবিধার্থে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে চাঁদা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। পেনশনের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমা অর্থাৎ ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে পুঞ্জীভূত লভ্যাংশসহ জমার বিপরীতে নির্ধারিত হারে পেনশন দেওয়া হবে।
এ ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তি আমৃত্যু পেনশন সুবিধা পাবেন। কোনো পেনশনার পেনশন পাওয়া অবস্থায় ৭৫ বছর বয়সের আগে মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময় অর্থাৎ মূল জমাকারীর বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত মাসিক পেনশন পাবেন। পেনশন স্কিমে জমা করা টাকা কোনো পর্যায়েই এককালীন তোলার সুযোগ থাকবে না।
তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করা যাবে। পেনশন তহবিলে কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করার আগে কেউ মারা গেলে তার জমা করা টাকা মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে। মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। এ ব্যবস্থা স্থানান্তরযোগ্য ও সহজগম্য অর্থাৎ কারোর চাকরি পরিবর্তন বা স্থান পরিবর্তন করলেও পেনশন হিসাবে স্থিতি, চাঁদা দেওয়া ও অবসর সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
নিম্ন আয় সীমার নিচের নাগরিকদের ক্ষেত্রে পেনশন স্কিমে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসেবে দিতে পারে। পেনশন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্নিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার নির্বাহ করবে।