টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার দুই বছর পার করল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগের দুই মেয়াদে ১০ বছরসহ গত ১ যুগে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়ন, শান্তি চুক্তি, সমুদ্র বিজয়, নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর দেশজুড়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় পাল্টে গেছে জীবনধারা। তার সরকারের গৃহীত মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলসহ অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকার। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৯ সালে সরকারে আসে আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন চিত্রে বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে। গত ১২ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের এক যুগে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় সাফল্যের কথা সারা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ দেশটি হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ তাদের সর্বশেষ এক রিপোর্টে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১’ নামের এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয় গত ডিসেম্বরে। এতে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে, তারই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। সিইবিআর প্রতিবছর এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। এদিকে, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়েও বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় নির্বাচনের দলের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ। ক্ষমতায় আসার পরই নানা ষড়যন্ত্র ও দেশ-বিদেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১০ ডিসেম্বর সেতুর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর পুরো মূল কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগের পথ সুগম হয়েছে। গত ১২ মার্চ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের নকশাও করা হয়েছে। যেখানে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালানো যাবে। আগামী ২০ বছরের ক্রমবর্ধমান যান চলাচলের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ১১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্রের এ পর্যন্ত ৩১ শতাংশের বেশি ভৌতকাজ শেষ হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু করার নতুন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে কাজ। এমআরটি-৬ নামের এ প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও ১১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার অংশ পর্যন্ত ২০২১ সাল এবং আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ছিলো। গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। ‘ওয়ান সিটি-টু টাউন’ মডেলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে তৈরি হচ্ছে সাড়ে তিন কিলোমিটারের সুড়ঙ্গপথ। চীনা অর্থায়নে চলমান বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে, বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। এরপর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সাতটি যুদ্ধাপরাধ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। গত ২০২০ সালের ৭ এপ্রিল ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১২ এপ্রিল তার মৃতু্যদন্ড কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতোই চ্যালেঞ্জ নিয়েই ছিটমহল সমস্যার সমাধান, সমুদ্র সীমানার বিরোধেরও নিষ্পত্তি করে বর্তমান সরকার। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পায়। সূত্রমতে, ২০০৬ সালে বিদু্যৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো তিন হাজার ৩৭৮ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে বিদু্যৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। বর্তমান সরকারের এক যুগে ২০২০ সালে বিদু্যৎ উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৭৭৭ মেগাওয়াট। ২০০৬ সালে মোট বিদু্যৎকেন্দ্র ছিলো ৪২টি। ২০২০ সালে এর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ১৪০টিতে। ২০০৬ সালে মাথাপিছু বিদু্যৎ উৎপাদন ছিলো ১৭৬ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। ২০২০ সালে মাথাপিছু বিদু্যৎ উৎপাদন দাঁড়ায় ৫১২ কিলোওয়াট/ঘণ্টা। ২০০৬ সালে বিদু্যৎ আওতাধীন জনগোষ্ঠী ছিলো ৩৮ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ শতাংশে। ২০০৬ সালে রপ্তানি আয় ১.০৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৩.৬৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে বয়স্ক ভাতার পরিমাণ ছিলো ২০০ টাকা। ২০২০ সালে ভাতার পরিমাণ বেড়ে হয় ৫০০ টাকা। ২০০৬ সালে অতি দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ সালের তথ্য চিত্র অনুযায়ী অতি দারিদ্র্যের হার ১০ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিলো ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। বর্তমানে বৈদেশিক বিনিয়োগ ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ দশমিক ০৯ ডলার। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৬০ মার্কিন ডলার। তা বড়ে বর্তমানে দুই হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। ২০০৬ সালে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছিলো ৫০০ টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার টাকায়। ২০০৬ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো ৯১তম। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম। ২০০৬ সালে দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে তা ২০ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় ৪৫ দশমিক ৬ কোটি ডলার। ২০২০ সালে বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৬ সালে খাদ্য উৎপাদন ছিলো ২৭২ লাখ মেট্রিকটন। বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন হয় ৪০০ লাখ মেট্রিক টন। ২০০৬ সালে রপ্তানি আয় ছিলো ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৩৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ০৯ ডলারে। ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিলো ৬৫ দশমিক ৪ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ দশমিক ৬ বছর। ২০০৬ সালে প্রবৃদ্ধির হার ছিলো ৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এখন প্রবৃদ্ধি এসে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ২০০৬ সালে মাতৃত্বকালীন ছুটি ছিলো ৪ মাস। বর্তমান সরকারের একযুগ পূর্তির সময় তা বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার এক যুগের মধ্যে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের বছর ছিলো বিদায়ী ২০২০ সাল। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ঘিরে দেশব্যাপী উৎসবমুখর কর্মসূচি নেয়া হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছু থমকে দেয়, বড় ধরনের ধাক্কায় পড়ে সরকার। উৎসবের বছর পরিণত হয় আতঙ্ক আর হতাশায়। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে যখন করোনাসংকটে নানা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তখন তা মোকাবিলায় যুগোপযোগী পদক্ষেপ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক লাখ ১২ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও যথাসময়ে প্রায় সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। গত ১১ বছরে ৩৬৬ কোটি ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬৬টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ বছর বই বিতরণ শেষ হলে সর্বমোট ৪০১ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৮টি বই বিতরণ করা হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উপহার হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে মুক্তিযোদ্ধাদের। আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে এসব বাড়ি হস্তান্তর করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেয়া হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সারা দেশে অতিরিক্ত ১৩.৭৫ কোটি টাকা ও ২৩ হাজার টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে। এসব চাল ও টাকা ত্রাণ হিসেবে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। গত জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে জিআর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ৩৭ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ১৯৩ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবার সংখ্যা এক কোটি ৩৪ লাখ ২৩ হাজার ৫০৪টি এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা ছয় কোটি তিন লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ জন। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট যেসব রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে সীমান্তে ভিড় করেছিল, মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে বিশ্বমানবতার বিবেক হিসেবে প্রশংসা পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন সময় প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে বাংলাদেশে এসেছে। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, কুতুপালংসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের নিরাপদ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ সরকার। আধুনিক সুবিধাসম্বলিত একটি সিটি গড়ে তোলা হয়েছে ভাসানচরে। শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্বের বুকে এটি অনন্য দৃষ্টান্ত। চারপাশে শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ করে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এক লাখ মানুষের আবাসনের জন্য এটি গড়ে তোলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগষ্ঠিতা অর্জনের পর ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে সরকার। এরপর ২০১৪ সালে এবং ২০১৮ সালে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি তৃতীয় মেয়াদ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় দলটি। ফলে টানা ১২ বছর ধরে দেশ পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। এর আগে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ। এরপর ২৩ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার দায়িত্বভার গ্রহণ করে শেখ হাসিনা। এদিকে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে নির্বাচনি ইশতেহারে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটির ইশতেহারের স্স্নোগান ছিলো ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এতে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতিটি ইশতেহারে গণতন্ত্র, ক্ষমতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং মাদক নির্মূলের বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায়। ২০০৮ সালে ১২ ডিসেম্বর ‘দিনবদলের সনদ’ শিরোনামে দলের নির্বাচনি ইশতেহার তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ওই ইশতেহারে ‘রূপকল্প ২০২১’ শিরোনামে বাংলাদেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে এটা বাস্তবায়নই ছিলো আওয়ামী লীগের প্রধান নির্বাচনি প্রতিশ্রম্নতি। ২০১৮ সালে একাদশ নির্বাচনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত বিষয়গুলোর অগ্রগতি তুলে ধরার পাশাপাশি ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এতে উলেস্নখ করা হয়েছে ১০০ বছর মেয়াদি ‘ডেল্টা পস্ন্যান’।