স্যানিটেশনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় এসেছে। এক ভাগ মানুষ এখনও স্যানিটেশনের আওতায় আসেনি। নানা কারণে তারা এর আওতায় আসতে পারেনি। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই এক ভাগ মানুষকেও স্যানিটেশনের আওতায় আনা হবে। এ তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এখনও শতভাগ স্যানিটেশনে যেতে পারিনি। কারণ অনেক বস্তি, নদী ভাঙ্গা মানুষ, বেদে পরিবারের জন্য স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছেন না। শতকরা ৯৯ ভাগ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় চলে এসেছে। এই এক ভাগ মানুষের জন্য সরকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তাদের স্যানিটেশনের আওতায় আনা হবে। এসডিজি অর্জনে স্যানিটেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে তাদের বিষয়টিও রয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশ প্রায় শতভাগ স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় চলে এসেছে। সারাদেশে স্যানিটেশন ব্যবস্থা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শতকরা ৯৯ ভাগ জনগণ মৌলিক স্যানিটেশনের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ৬২ ভাগ জনগণ উন্নত ল্যাট্রিনের আওতাভুক্ত রয়েছে। বাকি ২৮ ভাগ জনগণ যৌথ ল্যাট্রিন এবং ১০ ভাগ অনুন্নত ল্যাট্রিন ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগের হার প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ২০০৩ সালে মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ স্যানিটেশনের আওতায় ছিলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সামগ্রিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ঝড় জলোচ্ছ্বাস কবলিত উপকূল অঞ্চলসমূহে, পৌর এলাকায়, গ্রোথ সেন্টার, ইউনিয়ন পরিষদ ও কিছু কিছু সমস্যাসঙ্কুল এলাকায় উন্নত স্যানিটারি ল্যাট্রিন, পাবলিক টয়লেট ও কমিউনিটি ল্যাট্রিন স্থাপন করেছে। বর্তমানে চলমান ‘জাতীয় স্যানিটেশন (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্প থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় পিট ল্যাট্রিন স্থাপন করা হচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সাইফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, জাতীয় স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে এখন রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। দেশের কোন মানুষ এখন আর খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে না। এক শতাংশের কম মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। এই এক শতাংশ মানুষের জন্যও কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে তাদেরও স্যানিটেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, সত্তরের দশকে বাংলাদেশে স্যানিটারি ল্যাট্রিনের হার খুবই কম ছিল। বিশ্বব্যাংকের পানি ও স্যানিটেশন কর্মসূচী নির্ণয় করেছে যে সে সময়ে বাংলাদেশে স্যানিটেশনের হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। ইউনিসেফের নলকূপ বিপ্লবের পাশাপাশি আশির দশকে খাবার স্যালাইনের সফল প্রচলন ঘটিয়ে ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুহার অনেক কমিয়ে আনতে পারলেও স্যানিটারি ল্যাট্রিনের স্বল্প ব্যবহারের কারণে ডায়রিয়াজনিত রোগ ও অপুষ্টির ব্যাপকতা আনুপাতিক হারে কমেনি। নব্বই দশকের শুরুর দিকেও বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করত। সেই সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর ইউনিসেফ যৌথভাবে একটি কর্মসূচী পরিচালনা করে। ওই কর্মসূচীর নাম ছিল ‘জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি)। জেএমপি পৃথিবীর প্রায় সব দেশের সুপেয় পানি আর স্যানিটেশনের হার নিরূপণ করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে জেএমপি হিসাব বাংলাদেশে খোলা মাঠে পায়খানার হার মাত্র ৩ শতাংশ। সে সময় প্রতিবেশী ভারতে এই হার ছিল প্রায় ৪৮, নেপালে ৪৩ আর পাকিস্তানে ২৩ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা শতভাগের কাছাকাছি।
জাতীয় স্যানিটেশন প্রকল্পের পিডি মোঃ আবদুল মোন্নাফ জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে প্রকল্পে তৃতীয় ফেস চলছে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে তৃতীয় ফেস শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এ বছরের ডিসেম্বরে। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় ধরে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। ১০ কোটি টাকা বেঁচে যাবে। কারণ প্রকল্পের সব কাজ প্রায় শেষ। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ স্যানিটারি ল্যাট্রিনকে জনপ্রিয় করার জন্য কখনও বিনামূল্যে, কখনও স্বল্পমূল্যে জনগণকে ল্যাট্রিনের রিং স্ল্যাব সরবরাহ করেছে। এতে সাফল্য এসেছে সীমিত আকারে। নব্বই দশকে এসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর, ইউনিসেফ এবং অন্যান্য দাতা সংস্থা ও এনজিও বেশ জোরেশোরে নামে স্যানিটেশনকে এক দশকের মধ্যে শতভাগে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। এটা ছিল একটি আন্দোলন।