বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে দুটি ব্লকে প্রায় এক হাজার একর জায়গাজুড়ে ঘটতে যাচ্ছে সবুজ শিল্পবিপ্লব। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পে’র মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা (গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি) গড়ে তোলে এই বিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা)। এতে কর্মসংস্থান হবে ১৫ লাখ মানুষের।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্পে’র মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা এবং সরকারি অর্থায়ন হবে ৩৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
অর্থনৈতিক জোন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী (বিএসএমএসএন) সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই সবুজ শিল্পবিপ্লব দেশের শিল্প খাতের জন্য মডেল হিসেবে কাজ করবে। একই সঙ্গে এটিই হবে দেশের সবচেয়ে বড় ইকোনমিক জোন, যার মোট আয়তন ৩০ হাজার একর। প্রকল্পটিতে কর্মসংস্থান হবে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের।
পরিকল্পনা কমিশন ও বেজা সূত্র জানায়, প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।
বেজার নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ ইরফান শরীফ বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প’টি স্বপ্নের। এটি বাংলাদেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন করে দেবে। সব সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির মাধ্যমেই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর উন্নয়ন প্রকল্প’ সবুজ শিল্পবিপ্লব ঘটাতে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে করিডোর ও বঙ্গোপসাগর উপকূলের নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সীতাকুন্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় যোগাযোগ সুবিধা থাকায় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে অভিবাসন বা রিসেটেলমেন্টের প্রয়োজন না হবার কারণে উক্ত এলাকায় সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্প এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হবে। শিল্পনগরকে পরিবেশ সহনশীল গ্রিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষ্য হচ্ছে- টেকসইকরণ এবং পরিবেশ সহনশীলতা নীতি ব্যবহারের উপকারিতাসমূহ প্রদর্শন করা। প্রকল্পটি তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় প্রায় ৩০টি জোনে বিভক্ত হবে। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
মোহাম্মদ ইরফান শরীফ বলেন, শিল্পনগরের জোন-১ (মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল) এর আওতাভুক্ত ৫৪৮ একর ভূমি উন্নয়নসহ অন্যান্য জোনের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ইউটিলিটি সেবা সৃষ্টি করা হবে। জোন ‘২এ’-তে ৯৩৯ একর ও জোন ‘২বি’-তে ৪৭৪ একরেরও উন্নয়ন করা হবে। শিল্পনগরে ৩০ কিলোমিটার চারলেন সড়ক, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেটওয়ার্ক, নিরাপত্তা বেষ্টনী, প্রশাসনিক ব্যবস্থা উন্নয়ন, ডিস্যালাইনেশন প্ল্যান্ট, স্টিম নেটওয়ার্ক, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, সোলার প্যানেল ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থাপনের মাধ্যমে ‘গ্রিন ইকোনোমিক জোন’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরো বলেন, এ শিল্পনগরী ঘিরে আশপাশের এলাকাগুলোতেও বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। চট্টগ্রামে নির্মিতব্য বে-টার্মিনালও বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে সহজ হবে পণ্য আমদানি-রফতানি। বিশেষ করে এই শিল্পনগরীতে উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বে-টার্মিনাল দিয়ে রফতানি হবে। এখন পর্যন্ত এ শিল্পনগরীতে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে এগিয়ে এসেছে জাপান, চীন, ভারত, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
বেজার তথ্য অনুযায়ী, এই শিল্পনগরীর অনুকূলে গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি মিলিয়ে অন্তত ১৯ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে, যার ১০ বিলিয়ন ডলারই বিদেশি বিনিয়োগ।