ডেস্ক নিউজ
বিশ্ব প্রবীণ দিবস কাল (১ অক্টোবর)। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৫৩ লাখের বেশি প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন রয়েছেন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশেরও বেশি। দেশের এই দেড় কোটিরও বেশি প্রবীণ নাগরিককে বিশেষায়িত আইডি (পরিচয়পত্র) কার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের, যারা সংশ্লিষ্ট কার্ড দিয়ে প্রবীণ নাগরিকের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। ইতোমধ্যে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণ ও সুরক্ষায় কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এ জন্য চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) এ খাতের বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের টাকায় দেশের বয়স্কদের ভাতা, বিধবা বা স্বামী-নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতাসহ ৯ ক্যাটাগরির প্রবীণদের জন্য ব্যয় করা হবে। ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণদের সংখ্যা হবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ। প্রবীণদের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে সরকারের বরাদ্দও ভবিষ্যতে বাড়ানো হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চলতি বছর ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এ দিবসটি পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতিবছরের মতো এবারও সমাজসেবা অধিদফতর দিবসটি পালন করবে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৯১ সাল থেকে দিবসটি পালন করা শুরু হয়। দিবসটি উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদফতর বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও ১ অক্টোবর (শনিবার) উদ্যাপিত হবে ৩২তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। প্রবীণদের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ পোস্টার ও লিফলেট ছাপানো হয়েছে। এ ছাড়া দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদফতরে আলোচনা সভা ও র্যালির আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রধান অতিথি হিসেবে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সমাজকল্যাণ সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য ৬০ বছর ও তদূর্ধ্ব এবং উন্নত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ৬৫ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের প্রবীণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যাপক উন্নতি, সচেতনতা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন মৃত্যুহার যেমন হ্রাস করেছে, পাশাপাশি মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ফলে বিশ্বসমাজে বয়স্কদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বৈশি^ক জনমিতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। এ সময় মানুষের গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে। সমীক্ষামতে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সংখ্যা ১ দশমিক ৫ বিলিয়নে উন্নীত হবে। বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগের ফলে গত এক দশকে বাংলাদেশে সামাজিক সূচকে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২.৪ বছরে উন্নীত হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে দেশের প্রবীণ লোকের সংখ্যা। বর্তমানে বাংলাদেশে ১ কোটি ৫৩ লাখের বেশি প্রবীণ বা সিনিয়র সিটিজেন রয়েছেন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশেরও বেশি। জাতিসংঘের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০৫০ সালে এ সংখ্যা সাড়ে চার কোটিতে পৌঁছাবে। বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজনে একজন প্রবীণ হবেন, যা ওই সময়ের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। বাংলাদেশে আগামী ২০৫০ সালে শিশুর চেয়ে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা ১ শতাংশ বেশি হবে। ওই সময় শিশুর সংখ্যা হবে ১৯ শতাংশ এবং প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা হবে ২০ শতাংশ।