জাপানের সহযোগীতায় যমুনা নদীর উপর নির্মাণ করা হচ্ছে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু ডুয়েল গেজ (ডাবল লাইন) রেল সেতু। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আসতে শুরু করেছেন। আগামী মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন জানান, ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণে প্রয়াজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল সেতু নির্মাণ করবে জাপানের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, যমুনা নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর কয়েকশ গজ উত্তরে এই রেলসেতুটি নির্মিত হবে। সংশোধিত প্রকল্পের সময়সীমা দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সাথে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু প্রকল্প ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা করা হয়েছে।
ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের এই সেতুটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে। এছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এই সেতু সহায়তা করবে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৪৪টি ট্রেন চলাচল করে। সেতুটি নির্মাণ হলে বঙ্গবন্ধু সেতু রেল লাইন তুলে নেয়া হবে। নতুন সেতুতে ডবল লাইনে ট্রেন চলাচল আরো সহজ হবে। এছাড়া নতুন ট্রেন চালানো যাবে, অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে সেতুটি দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।
রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, সেতুর কাজ শুরুর যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই নভেম্বর মাসে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হবে। রেলমন্ত্রী বলেন, এই দিনে প্রধানমন্ত্রী নিজে যমুনা নদীর পাড়ে গিয়ে এই রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে পারেন অথবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও হতে পারে। সকল কাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে। জাপানি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু সেতুর নির্মাণ কাজ করবে বলে মন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, সরকার ভারতের সাথে বাংলাদেশের ট্রেন পরিচালনার কথা ভাবছে। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সাত কিলোমিটার রেললাইন সংযোগ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে ভার্চুয়াল বৈঠকে এই রেল সংযোগ উদ্বোধন করবেন। এটি চালু হলে আমরা ঢাকা থেকে শিলিগুঁড়ি ট্রেন চালু করতে পারবো।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর উভয় দিকে ভায়াডাক্ট থাকবে ৫৮০ মিটার। যমুনা ইকোপার্কের পাশ দিয়ে এটি বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম অংশের রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে। এজন্য ৩ দশমিক ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি তিনটি স্টেশন বিল্ডিং, তিনটি প্লাটফর্ম ও শেড, তিনটি লেভেল ক্রসিং গেইট ও ছয়টি কালভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আর রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও দুটি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। তবে বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের সময় নদীশাসন করায় এ খাতে এখন আর ব্যয় হবে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু রেল সেতু দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। এছাড়া কনটেইনার ট্রেন চলবে ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঘণ্টায় ৭-২০ কিলোমিটার গতিতে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। আর পণ্যবাহী ও কনটেইনারবাহী ট্রেন চলাচল নিষিদ্ধ। গতি বাড়ায় নতুন সেতু দিয়ে দৈনিক ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বাড়ানো যাবে। আর পণ্য পরিবহন বাড়ানো যাবে ১৬০ শতাংশ। ফলে দৈনিক মালবাহী ট্রেনে সাড়ে ৩২ টন মালামাল পরিবহন করা যাবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী কামরুল আহসান জানান, দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটি দুটি প্যাকেজের আওতায় নির্মিত হবে। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহ ভাগ (৭২%) ঋণ সহায়তা দেবে জাপান (জাইকা)। সেতুটির পূর্ব অংশ নির্মাণ করবে ওবায়শি কর্পোরেশন, টিওএ কর্পোরেশন এবং জেএফই। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ব্যয় ৬ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। আইএইচআই এবং এসএমসিসির যৌথ উদ্যোগে নির্মিত হবে পশ্চিম অংশ। এই অংশের জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা আসতে শুরু করেছেন। ৪ বছর মেয়াদী বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্পটি আগামী ২০২৪ সালে সমাপ্ত হবে বলে তিনি জানান।