ডেস্ক নিউজ
প্রায় চার মাস পর পদ্মা সেতুর ১৫তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতুর এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ সোয়া দুই (২ দশমিক ২) কিলোমিটার দৃশ্যমান হলো। মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যানটি বসানো হয়। এর আগে গত ২৯ জুন মাওয়া প্রান্তে ১৪তম স্প্যান বসানো হয়। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ডাঙার অংশসহ ৯ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্প্রতি তিনি জানান, পদ্মা সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ শতাংশ।
নদীর তীব্র স্রোত ও নাব্যতা সংকটের কারণে গত চার মাস কোনো স্প্যান বসানো যায়নি বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা। সর্বশেষ যে স্প্যানটি বসানো হয় সেটিও কয়েক দিন আগে ২৩ ও ২৪ নম্বর পিলারের কাছে নিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নাব্য সংকটের কারণে বসানো যায়নি এত দিন। ইতিমধ্যে ড্রেজিং করে পানির গভীরতা বাড়ানো হয়।১৫তম স্প্যানটির দৈর্ঘ্য আগের সব কটির মতো ১৫০ মিটার এবং ওজন ৩ হাজার ১৪০ টন। স্প্যানটি মাওয়া কন্সট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে বহন করে নিয়ে যায় ৩ হাজার ৬০০ টন ধারণক্ষমতার তিয়ান ‘ই’ ক্রেন।
পদ্মা সেতুর স্প্যান নির্মাণ করা হচ্ছে চীনে। মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩১টি দেশে আনা হয়েছে বলে জানান প্রকল্প কর্মকর্তারা। এর মধ্যে ১৫টি স্প্যান নদীর ওপর বসানো হয়েছে। পাঁচটি স্প্যান বসানোর জন্য তৈরি আছে। এর মধ্যে চারটি আছে মাওয়ায় কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডে। বাকি একটি চর এলাকায় ২৮ নম্বর পিলারের কাছে রাখা হয়েছে। এদিকে ৪২টি পিলারের মধ্যে ৩২টির নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পিলারের ওপর স্থাপন করা স্প্যানের বা লোহার কাঠামোর ভেতর দিয়ে চলবে ট্রেন। আর স্প্যানের ওপর তৈরি হবে পিচঢালাই পথ, যেখানে চলবে মোটরগাড়ি।
যেসব স্প্যান বসানো হয়েছে, সেগুলোতে রেললাইনের স্ল্যাব বসানো চলছে। ইতিমধ্যে ৩৬১টি স্ল্যাব বসানো হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানায়, রেললাইনের জন্য এরই মধ্যে ২ হাজার ৮৯১টি স্ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মোট স্ল্যাব লাগবে ২ হাজার ৯৫৯টি। অন্যদিকে ২ হাজার ৯১৭টি প্রি-কাস্ট রোডওয়ে ডেক স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৫৫৩টির কাজ শেষ হয়েছে এবং ৫৪টি স্থাপন করা হয়েছে। বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদী শাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
৩০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর যাত্রা শুরু ২০০৭ সালে। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। এরপর নানা কারণে দীর্ঘদিন প্রকল্প বন্ধ থাকে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এতে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসানো হয় দ্বিতীয় স্প্যান।