ডেস্ক নিউজ
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের নামে আবার নতুন করে লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সাথে নির্ধারণ করা হচ্ছে সর্বোচ্চ সুদহারের সীমা। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার বেঁধে দেয়ার আগে এনজিওরা গ্রাহকদের কাছ থেকে ইচ্ছে মাফিক সুদ আদায় করত। গ্রাহকদের কাছ থেকে কী পরিমাণ সুদ আদায় করা হয় তার ওপর এমআরআর একটি জরিপ কার্যক্রম চালায়। এতে এনজিওরা তাদের বিতরণকৃত ক্ষুদ্র ঋণের ওপর গ্রাহকদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত সুদ আরোপ করার প্রমাণ পায়। গ্রাহকদের কাছ থেকে ৮৫ শতাংশ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরও বেশি সুদ আদায় করার প্রমাণ পায় এমআরএ। বিতরণকৃত ক্ষুদ্র ঋণের ওপর ২০ শতাংশ সুদ আরোপ করলেও যে প্রক্রিয়ায় কিস্তি আদায় করা হয় তাতে বছর শেষে সুদ তিন গুণে অর্থাৎ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত চলে যায়। যেমন, ১০০ টাকার ঋণ বিতরণ করলে ২০ শতাংশ হারে বছর শেষে ১২০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ১২০ টাকাকে ৫২ সপ্তাহ দিয়ে ভাগ করে যে দিন ঋণ বিতরণ করে ওই সপ্তাহ থেকেই গ্রাহকের কাছ থেকে সম হারে কিস্তি আদায় করতে থাকে। এতে বছর শেষে প্রকৃত সুদহার পড়ে ৬০ শতাংশ।
এমআরএর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সুদহার নিয়ে এ জালিয়াতি বন্ধে এবং ক্ষুদ্র ঋণের সুদহার নির্ধারণের জন্য মাঠ পর্যায়ের এনজিওদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়। এরপর এর ওপর একটি খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করে তার ওপর মতামত নিতে একটি জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করা হয়। ওই সেমিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশের ভিত্তিতে সুদের হার চূড়ান্ত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তা অনুমোদন দেয়ার পর ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সুদের হারে সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে ২৭ শতাংশ, পরে ২৪ শতাংশ এবং সর্বশেষ ১৮ শতাংশ সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দেয়া হয়।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এমআরএ পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন করে লাইসেন্স দেয়া ও সর্বোচ্চ সুদহার হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে লাইসেন্সে দেয়ার প্রক্রিয়া ও সুদহার হালনাগাদ করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এজন্য ১০ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এমআরএ সূত্র জানায়, এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এই লাইসেন্স দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হলো। এর আগে আর দুই দফায় লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৪৬টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই দফায় লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে দেশের চরাঞ্চল, সীমান্ত অঞ্চল ও তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
আবেদন দেয়ার প্রক্রিয়ার বিষয়ে ওই সূত্র জানিয়েছে, আবেদন করতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দেশে প্রচলিত সোসাইটি অ্যাক্ট, ট্রাস্ট অ্যাক্ট, ভলান্টারি সোসাইটি ওয়েলফেয়ার অধ্যাদেশ বা কোম্পানি আইনের যেকোনো একটিতে নিবন্ধিত হতে হবে। এসব আইনের আওতায় সদস্যদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকা ঋণ বিতরণের স্থিতি থাকতে হবে। এসব যোগ্যতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হলে তিন বছরের জন্য সাময়িকভাবে ক্ষুদ্র ঋণ পরিচালনার অনুমোদন দেয়া হবে। অনুমোদন পাওয়ার তিন বছরের মধ্যে ন্যূনতম ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা ১ হাজার এবং ঋণের স্থিতি কমপক্ষে এক কোটি টাকা হতে হবে। তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত সনদ লাভের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। এ শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে সাময়িক লাইসেন্স বাতিল বলে গণ্য হবে।