ডেস্ক নিউজ
- জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি গৌরব ও সম্মানের
- সিডিপির তিনটি সূচকের শর্ত পূরণ
- অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে গতি বাড়াতে প্রস্তুতি শুরু
- শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা নিশ্চিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ ও এফটিএ করা হবে
মহান স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নের পর বাংলাদেশ সময় শুক্রবার গভীর রাতে এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া গেছে। এই স্বীকৃতি দেশের জন্য গৌরব ও সম্মানের। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে এলডিসি দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠান উদযাপন সামনে রেখে এই অর্জন ঐতিহাসিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মহামারী করোনার মতো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ খ্যাত বাংলাদেশের এই স্বীকৃতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকান্ড আরও দ্রুত সম্প্রসারণ হবে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন। দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানে নতুন গতি সঞ্চার হবে। উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণ এই সুখবর জাতিকে জানাতে আজ শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, এলডিসি থেকে কোন দেশ বের হবে সেই বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে জাতিসংঘের সিডিপি। এ জন্য প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে সিডিপি বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুররতাএই তিনটি সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোন দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়। সিডিপির পরপর দুই মূল্যায়নে এসব
মান অর্জন করলেই এলডিসি থেকে বের হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের সিডিপির মূল্যায়নে তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছিল। এবার ২০২১ সালের মূল্যায়নেও তিনটি সূচকেই তিনটি সূচকে মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে এলডিসি থেকে বের হয়ে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার চূড়ান্ত স্বীকৃতি মিলতে বাংলাদেশকে আরও তিন বছর অপেক্ষা করতে হতে পারে। সাধারণত সিডিপির সুপারিশের তিন বছর পর চূড়ান্ত স্বীকৃতি মেলে। ওই হিসেবে আগামী ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই চূড়ান্ত স্বীকৃতি আসতে পারে। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ থেকে আরও দুই বছর সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। সিডিপি আবেদন আমলে নিলে সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে আরও পাঁচ বছর লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত সুপারিশ আসবে ২০২৬ সালে। তবে বাংলাদেশ চেষ্টা করছে দ্রুত করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে। এ কারণে অর্থনীতি গতিশীল করার প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। এলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন ও বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এলডিসি উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও সম্মানের। করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নানামুখী চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। এরপরও বাংলাদেশ যথা সময়ে এলডিসি গ্রাজুয়েশন করবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই সোনার বাংলা গড়ার কাজ করছেন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এখন আর স্বল্পোন্নত দেশ নয়। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
জানা গেছে, এলডিসি দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার পর অর্থনীতিতে বেশকিছু ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান পাওয়ার ক্ষেত্রে দাতাদের কঠিন শর্তের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার বেশকিছু সুবিধাও রয়েছে। বিশ্বের বড় বড় উদ্যোক্তা এখন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ নিয়ে আসবেন। এছাড়া দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বড় ঋণপ্রাপ্তি আরও সহজ হবে। এছাড়া পণ্য রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা ভোগ করতে পারবে বাংলাদেশ।
দেশে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। এই স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। আবার কিছু চ্যালেঞ্জও আসবে। চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেতে বাংলাদেশের সামনে যে সময় রয়েছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিকে প্রস্তুতিকাল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এলডিসি থেকে বের হলে অনেক বাণিজ্য সুবিধা থাকবে না। এ কারণে এলডিসি থেকে বের হলে বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি অর্জনে তিনটি সূচকের শর্ত পূরণ ॥ জাতিসংঘের সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তিনটি সূচকের শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সিডিপির সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোন দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ হতে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশ ২০২০ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ হতে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন, বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোন দেশের পয়েন্ট ৩৬ এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২ এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ২৫ দশমিক ২।
তবে সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। করোনাভাইরাসের মহামারীর বাস্তবতায় উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসই ও মসৃণ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে সিডিপির কাছে প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় চাওয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠলে সস্তা ঋণ পাওয়া এবং বিভিন্ন রফতানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ফলে সেই সুবিধাগুলো উত্তরণের প্রস্তুতি পর্বে চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগসুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) প্রফেসর শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সিদ্ধান্ত দিয়েছে সিডিপি। তবে প্রস্তুতিপর্বের সময় দুই বছর বাড়ানো হয় কিনা, সে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। এটি হলে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটি সময়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ পেতে চলেছে, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে জাতি।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ১৯৭১ সালে কিছু নির্ণায়কের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে কম উন্নত দেশগুলোকে স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি হিসেবে পৃথকভাবে শ্রেণীবদ্ধ করে। ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত দেশের সংখ্যা ছিল ২৫, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে এ পর্যন্ত বতসোয়ানা, কেপভার্দে, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু উত্তরণ ঘটাতে পেরেছে।
কোভিড-১৯ মোকাবেলা করে এলডিসি উত্তরণ ॥ করোনা মহামারী মোকাবেলা করে এলডিসি উত্তরণ করল বাংলাদেশ। আগামী দিনে অর্থনীতি বেগবান ও শক্তিশালী করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। করোনার কারণে এলডিসি উত্তরণের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসা হয়নি। বরং এলডিসি হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধা বহাল ছিল তা আগামী ১০ বছর বৃদ্ধি করে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত দাবি করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তুলে ধরছে। এলডিসি থেকে রেরিয়ে গেলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুযোগ-সুবিধা পাবে। কিন্তু এজন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কাছে আপীল করার নিয়ম রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়েও এলডিসি উত্তরণে নানা সুবিধা হারানোর কথা বলেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
জানা গেছে, এলডিসি দেশ হিসেবে আরও ১০ বছর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বলছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। রফতানিকারকরা ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। এলডিসি উত্তরণের পরও পরবর্তী ৮-১০ বছর বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধাগুলো যাতে বহাল থাকে সেটির জন্য কাজ করার জন্য বাণিজ্য সচিব সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অনুরোধ করেছেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, নির্দিষ্ট সময় ২০২৪ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তবে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা আরও ১০ বছর বাড়ানোর কথা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি, করোনা পরিস্থিতি বিচেবনায় নিয়ে সংস্থাটি ২০৩৪ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, রেমিটেন্সে বৃদ্ধি, রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, শিল্পের উৎপাদন সচল থাকা, কর্মসংস্থান এবং বড় বড় প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত থাকায় অর্থনীতির স্পর্শকাতর সূচকগুলো শক্ত অবস্থানে রয়েছে। আর এ কারণেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বিভিন্ন দেশের অগ্রাধিকার ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হবে ॥ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম গতিশীল ও রফতানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করার প্রস্তুতিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে ১১টি দেশের সঙ্গে এ সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা ও সমীক্ষা যাচাই করা হয়। ভুটানের পর এবার নেপালের সঙ্গে পিটিএ করা হবে। এরপর ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের সঙ্গে পিটিএ করা হবে। শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে পিটিএ, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এফটিএ এবং বৃহৎ অংশীদারিত্ব বাণিজ্য চুক্তির (সিপা) মতো বড় বড় চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে রফতানিতে জিএসপি প্লাস সুবিধা নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি পর্যালোচনা করছেন।
এলক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে দরকষাকষি করা হচ্ছে। এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরও যাতে অন্তত্ব ১২ বছর স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রফতানি-আমদানি বাণিজ্যে সুযোগ সুবিধা বহাল রাখা হয় সেজন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দফতর ইউএসটিআরে আবেদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ও এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ জসিম উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী সামনে রেখে এলডিসি গ্রাজুয়েশন বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন। তবে এই অর্জন ধরে রাখতে হলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। জিএসপি প্লাস এবং পিটিএ এবং এফটিএর দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ডব্লিউটিওতে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যেও (ইউকে) বাংলাদেশের হাই কমিশনার আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। তার এই ঘোষণার পর রফতানিকারকরা আশাবাদী হয়ে উঠছেন। এছাড়া সরকারী সংস্থাগুলোও শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায়ে কাজ করছে।