ডেস্ক নিউজ
দেশের রফতানি খাত মাত্র একটি পণ্যের ওপর নির্ভর করে আছে। আর তা হলো তৈরি পোশাক। আরও অনেক পণ্য রফতানি হলেও তা খুবই কম। পাট, চামড়া, ওষুধ, বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য রফতানি হলেও তা একবারেই কম। দেশের মোট রফতানির ৮০ শতাংশই পোশাক। আর বাকি ২০ শতাংশ অন্যান্য খাত মিলিয়ে। তাই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে রফতানি বহুমুখীকরণের বিকল্প নেই। তাই রফতানি পণ্য বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে রফতানি বাড়াতে নতুন করে আরও চারটি পণ্যে প্রণোদনা দিয়েছে সরকার।
রফতানি বাণিজ্যকে উৎসাহিত করতে দেশে উৎপাদিত বাইসাইকেল ও বাইসাইকেলের যন্ত্র, চা, সিমেন্ট শিট এবং এমএস স্টিল দ্রব্য রফতানির বিপরীতে প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সুবিধা ২০২১-২২ অর্থবছরে জাহাজিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে নিট এফওবি মূল্যের ওপর ৪ শতাংশ হারে উৎপাদনকারী-রফতানিকারক প্রণোদনা প্রাপ্য হবে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নির্দেশনায় জানানো হয়, এই চারটি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। গত অর্থবছরের ৩৮টি পণ্যের সঙ্গে নতুন এই চারটি মিলে এখন মোট ৪২টি পণ্য রফতানিতে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দেবে সরকার। এ ছাড়া বিশেষায়িত অঞ্চলের (বেজা, বেপজা ও হাইটেক পার্ক) বিদ্যমান সহায়তার আওতা বাড়ানো হয়েছে।
সব ব্যাংকের কাছে পাঠানো সার্কুলারে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের মতো এবারও ১ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি অর্থবছরে নতুন যে চারটি খাত বা পণ্য যোগ করা হয়েছে, তাদের ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। বিদ্যমান সুবিধা ছাড়াও বিশেষায়িত অঞ্চলের ‘এ’ টাইপ ও ‘বি’ টাইপ প্রতিষ্ঠান প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রফতানির বিপরীতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা পাবে। বিশেষায়িত অঞ্চলের সব ক্যাটাগরিভুক্ত প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরে অন্যান্য পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ১ শতাংশ হারে রফতানি প্রণোদনা সহায়তা পাবে। সার্কুলারে আরও বলা হয়, সফটওয়্যার আইটিইএস সেবা রফতানির বিপরীতে ব্যক্তি পর্যায়ের ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ফ্লোট গ্লাস শিট, ওপাল গ্লাসওয়্যার, কাস্ট আয়রন ও অ্যালুমিনিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য হালকা প্রকৌশল পণ্য খাতের আওতায় রফতানি ভর্তুকির জন্য বিবেচিত হবে। পাশাপাশি উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন পণ্য (কম্প্রেশার) এবং এইচসিএফসিমুক্ত রেফ্রিজারেটর ইলেক্ট্রনিক পণ্য হিসেবে কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল হোম ও কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স খাতের আওতায় রফতানি ভর্তুকি প্রাপ্য হবে।
সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অক্টোবর মাসে ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমমূল্যের পণ্য রফতানি হয়েছে। আর জুলাই থেকে অক্টোবর চার মাসে রফতানি হয়েছে এক হাজার ৫৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার সমমূল্যের পণ্য। যেখানে এই চার মাসে শুধু পোশাক রফতানি করে আয় হয়েছে এক হাজার ২৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ পণ্য রফতানিই হয়েছে তৈরি পোশাক। আর বাকি ২০ শতাংশ অন্যান্য।
যেখানে চার মাসে পোশাক রফতানি হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি ডলার, সেখানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ৩৬ কোটি ডলার। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে ৩৩ কোটি ডলার। কৃষিপণ্য রফতানি হয়েছে ৪৬ কোটি ডলার। অন্যান্য পণ্য রফতানি আরও কম। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের যে পণ্যগুলোকে প্রণোদনা দেওয়া হয় সেগুলো কিছু ব্যবসায়ীকেন্দ্রিক বা শুধু একটি পণ্যকেন্দ্রিক। যার কারণে শুধু ওই পণ্যটিই সুবিধা পায়। পণ্যের পাশাপাশি এর বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকেও প্রণোদনার আওতায় আনা উচিত এবং একটি পণ্য প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে কতদিনের জন্য দেওয়া হচ্ছে সেটাও উল্লেখ করে দেওয়া উচিত। তা হলে ব্যবসায়ীরাও একটা পরিকল্পনা করতে পারেন। এবং সরকারও প্রণোদনা দিয়ে কতটা লাভ হলো সেটা দেখতে পারে। শুধু একটি পণ্যকে সুবিধা দিয়ে রফতানি বাড়ানো সম্ভব নয়।
রফতানি বহুমুখীকরণের বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, হালকা প্রকৌশল, পাট ও পাটজাতপণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও এ সম্পর্কিত সেবা, ওষুধ, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যসহ অনেক খাতে রফতানি সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সহায়ক নীতিমালা, স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণপ্রাপ্তি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক কমানো, অশুল্ক বাধা এবং কাস্টমস ও টেস্টিংয়ের দীর্ঘসূত্রতা দূর করা দরকার। এ ছাড়া দ্রুত এপিআই শিল্প পার্ক বাস্তবায়ন, পশ্চাৎসংযোগ শিল্পের উন্নয়ন, কৃষিকাজে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দর কষাকষিতে দক্ষতা উন্নয়ন করতে হবে। সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে বন্ডেড ওয়ারহাউস সুবিধা দিতে হবে।