নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও প্রায় আড়াইশ’ বছরের প্রাচীন নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে শ্মশান কালী মাতার পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যা থেকে শ্মশান প্রাঙ্গনে চলে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পাঠ। মঙ্গলবার শ্মশান কালী মাতার মন্দির প্রাঙ্গনে পরলোকগত সকল আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা এবং মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়। মোমবাতি ও মঙ্গল প্রদীপের আলোকসজ্জায় আলোকিত হয়ে উঠে মন্দির প্রাঙ্গন।
আয়োজন করা হয় রাতব্যাপী শ্মশান কালী মাতার পূজা আরতি, ভোগ রাগ ও প্রসাদ বিতরণের। পূর্ব পুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় হাজারো ভক্তমন্ডলীর আগমন ঘটে এই শ্মশান প্রাঙ্গনে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানতকারীরা এসে উপস্থিত হয় পূজা মন্দিরে। রাত ব্যাপী পূজা শেষে সকালে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
এই দেবীর বর্ণনা : এই দেবী অঞ্জন পর্বতের ন্যায় কৃষ্ণবর্ণ শুষ্ক শরীর বিশিষ্ট, রক্তিম আভা চক্ষু, মায়ের কেশ আলুলায়িত। এই দেবীর ডান হাতে সদ্য চিহ্ন আর বাম হাতে পূর্ণ নবনির্মিত পানপাত্র। দেবী সর্বদা সদাশিবের উপর দণ্ডায়মান। কপালে অর্ধচন্দ্র শোভিতা।
শ্মশান কথাটির অর্থ হল মৃত স্থান। চলতি কথায় যেখানে শব দাহ করা হয়। করালবদনী আদ্যা শক্তি মায়ের বিচরণক্ষেত্র। মা কালীকে ধ্বংসের দেবী বলে। এই ধ্বংস মানে সর্বনাশ করা নয়। এর অর্থ তিনি নিজেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড রচনা করেছেন। আবার তিনিই গুটিয়ে নেন। এখানে কালী পুজো করার অর্থ হল মানুষ তার শেষ জীবনে মায়ের কোলে আশ্রয় পায় এবং তাতে সে অসীম শান্তি ও আনন্দ পায়। শ্মশান ঘাটটি মন্দিরের মতোই পবিত্র। মন্দিরের শাস্ত্র পাঠ করে দেহের পরিণামের কথা বলা হয়। সেটার জীবন্ত উদাহরণ স্বচক্ষে দেখা যায় শ্মশানে গেলে। তাই শ্মশান মা কালীর এত প্রিয় স্থান।
শ্মশান কালীর পুজো তান্ত্রিক মতে মাছ, মাংস আর মদ দ্বারা পূজা করে থাকেন। তবে মাছ মাংস মদ এইসবই সংকেত মাত্র। এই পূজা সাধারণত শ্মশানেই হয়। সাধু-সন্তরা শ্মশানে এই কালীকে পুজো করে। শ্মশানের কালীর হাতের অস্ত্র খড়্গ। এই মায়ের বাহন হল শিয়াল। এই মন্দির কমিটির সদস্যরা জানান, এই মন্দিরটি প্রায় আড়াই’শ বছরের পুরনো। এই মন্দিরে প্রতিবছর তারা মায়ের পূজা করেন। পূজাকে কেন্দ্র করে মন্দিরে মেলা বসে। হাজার ভক্ত এই পূজা দেখতে আসে। সারারাত পূজা হয় এবং সকালে শ্মশান ঘাটে মায়ের বিসর্জ্জন দেওয়া হয়। এর আগে সকাল ১০ টায় শহরের লালবাজার জয়কালী বাড়ী মন্দিরের সামনে প্রতিমা শিল্পীর বাড়ী থেকে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা নিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষীন করে বড়হরিশপুর কাশিমপুর মহাশ্মশানের মায়ের মন্দিরের আসনে বসানো হয়।