নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
নাটোরের গুরুদাসপুরে মিরাক্কেল খ্যাত জনপ্রিয় কমেডিয়ান আবু হেনা রনির বন্ধুদেরকে মারধর ও রনির গাড়ি ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার সন্ধ্যার পর উপজেলার চাঁচকৈড় বাজারের আদম শাহ মোড়ে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রনি দুই বন্ধু তহুরুল ইসলাম ও রাজু ইসলাম আহত হয়েছে। তবে দুর্বৃত্তরা আবু হেনা রনিকে কোন আঘাত করেনি বলে দাবী করেছেন তিনি। এ ঘটনায় রনির আহত বন্ধু তহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ছাবলু মোল্লা সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৫/৭ জনকে অভিযুক্ত করে রাত ১১ টার দিকে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়ের পর পুলিশ আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে।
মামলা ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শুক্রবার আবু হেনা রনিসহ তার বন্ধুরা সিনেমা দেখার জন্য আদম শাহ মোড়ে সিনেমা হলের রাস্তার পাশে তাদের প্রাইভেটকারটি পার্কিং করেন। এ সময় অপর একটি প্রাইভেটকার যোগে স্থানীয় চাতাল ব্যবসায়ী ছাবলু মোল্লা এসে তাদের গাড়ি রাখা দেখে গালাগালি করতে থাকে। এক পর্যায়ে আবু হেনা রনিসহ তার বন্ধুরা ছাবলু মোল্লাকে গালাগালি করতে নিষেধ করায় ছাবলু মোল্লা গাড়ি থেকে নেমে তাদের উপর চড়াও হয়। এ সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। পরে ছাবলু মোল্লা উত্তেজিত হয়ে মোবাইল ফোনে কাউকে আসতে বললে ৮/১০টি মোটরসাইকেলে বেশ কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে আবু হেনা রনির বন্ধুদের মারপিট করে এবং রনির প্রাইভেটকার ভাংচুর করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা ঘটনাটি পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে রনি সহ তার বন্ধুদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় গত রাত ১১টার দিকে রনির বন্ধু তহুরুল ইসলাম বাদি হয়ে ছাবলু মোল্লাসহ ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৫ থেকে ৭ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এর পরই পুলিশ আসামীদের ধরতে তৎপরতা শুরু করে এবং আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করে। অন্য আসামীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
আবু হেনা রনি বলেন, তারা বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখার জন্য বিলদহর বাজার থেকে প্রাইভেটকার নিয়ে গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাজারে যান। এ সময় তার প্রাইভেট কার গাড়িটা সিনেমা হলের রাস্তার পাশে পার্কিং করছিলেন। এ সময় একটি প্রাইভেটকার এলোমেলোভাবে এসে রাস্তার পাশের জায়গায় গাড়ি পার্কিং করতে দেখে গালাগালি করতে থাকে।
তখন তিনি তাকে বলেন যে আমার গাড়ীটি রাস্তার পাশেইতো রাখা আছে, তবুও গালি দিচ্ছেন কেন? এই কথা বলার পর চাঁচকৈড় গাড়িষাপাড়ার ছাবলু মোল্লা ও তার ১০/১২জন সন্ত্রাসী বাহিনী এসে গালাগালি করেই বাটাম দিয়ে বেধড়ক মারপিট করে এবং তার গাড়ীটি ভাংচুর করে। পরে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। তিনি এই অন্যায় হামলার সঠিক বিচার চান।
আবু হেনা রনির বন্ধু ও মামলার বাদী তহুরুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যার পর আবু হেনা রনি সহ বন্ধুরা রনির প্রাইভেটকার নিয়ে প্রিয়তমা সিনেমা দেখার জন্য চাঁচকৈড় আনন্দ সিনেপ্লিজে যান। এ সময় রাস্তার পাশে তাদের প্রাইভেটকারটি পার্কিং করে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। পরে অপর একটি প্রাইভেটকার যোগে স্থানীয় চাতাল ব্যবসায়ী ছাবলু মোল্লা তাদের গাড়ি পার্কিং করা দেখে গালাগালি করতে থাকে। এ সময় গালাগালি করেত নিষেধ করায় ছাবলু মোল্লা গাড়ি থেকে নেমে তাদের উপর চড়াও হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ছাবলু মোল্লা মোবাইল ফোনে লোকজনকে ডাক দেয়। পরে ৮/১০ টি মোটরসাইকেলে ১২ থেকে ১৫ জন দুর্বৃত্ত এসে তাদের মারপিট করে এবং তাদের প্রাইভেটকার ভাংচুর করে চলে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ছাবলু মোল্লা সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় অভিযুক্ত ছাবলু মোল্লার সাথে যোহাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি তার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে প্রাইভেটকার যোগে চাঁচকৈড় হাটের ব্রীজের ওপর থেকে বাজারের দিকে ধীরে ধীরে নামছিলেন। সিনেমা হলের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিগারেট খাচ্ছিলো ৪/৫ জন যুবক। বার বার হর্ন দিলেও তারা রাস্তা থেকে সরে না দাঁড়াননি। এ কারণে হর্ন বেশি দেওয়ায় তাদের মধ্যে একজন এসে তার শার্টের কলার চেপে ধরে গাড়ি থেকে নামায়। তারা বেশি উত্তেজিত হওয়ার কারণে আত্মরক্ষার্থে তিনি তার কিছু স্বজনদের মোবাইল ফোন করে ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। তারা আসার পরে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিট শুরু হয়। ছাবলু মোল্লা আরও বলেন, তার ১২ বছর বয়সী ছেলেকে তারা লাথি মারার কারণে তার ছেলে গাড়ির সামনের কাঁচ ভেঙ্গে দেয়।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোনোয়ারুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু হেনা রনি সহ তার বন্ধুদের উদ্ধার করে হাসপতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। এ ঘটনায় রনির বন্ধু তহুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ছাবুল মোল্লার নাম নহ অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে আল আমিন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। মামলার অন্য আসামীদের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীদের নাম মিডিয়ার প্রকাশ পেলে তারা আত্মগোপনে চলে যাবে। তদন্তের স্বার্থে মামলার বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে তারা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করবেন।