নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়া উপজেলার রামানন্দ খাজুরার ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজে অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া প্রধান শিক্ষক এবং পরে সেই প্রধান শিক্ষকের দেয়া অন্য নিয়োগ ও কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির জমিদাতা, উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ আতাউর রহমান। এই প্রতিষ্ঠানের কিছু তথ্য প্রদানের জন্য তথ্য কমিশনে আবেদনের তিন বছরে বার বার শুনানি ও কমিশনের পক্ষ থেকে তথ্য প্রদানের নিদের্শ দিলেও আজ পর্যন্ত তাকে কোন তথ্য সরবরাহ করা হয়নি।
নাটোর জেলা সুজনের সাবেক সভাপতি ও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান শুক্রবার জানান, এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে তিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সভাপতি দ্বৈত নাগরিক আব্দুস সোবহান অন্যায়ভাবে প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমানকে চাকুরিচুত্য করে তার স্ত্রীর বড় বোনের ছেলেকে সকল বিধি লংঘন করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। বিধি মোতাবেক তার ১২ বছরের অভিজ্ঞতা, শিক্ষক নিবন্ধন ও বিএড ডিগ্রী না থাকলেও শুধুমাত্র আত্বীয়তার কারণে একজন বৈধ প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করে অবৈধ ভাবে বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূর নবীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এ বিষয়ে চাকুরিচুত্য প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান আদালতে মামলাও করেছেন। অবৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূর নবী তার পদ ধরে রাখতে এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী নিজের পিতা হত্যাসহ চারটি মামলার জামিনে থাকা আসামী দুর্ধর্ষ ডাকাত সদস্য মাহবুর রহমানকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে এবং কমিটির সদস্য আনিসুর রহমানের স্ত্রী নূর জাহানকে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারীসহ কয়েকজনকে অবৈধভাবে পিছনের তারিখ দিয়ে ভূঁয়া পত্রিকা ছাপিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন।
এ সব অবৈধ নিয়োগ বহাল রাখতে সরকারি বিধান লংঘন করে দ্বৈত নাগরিক আব্দুস সোবহানকে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করেছেন। এসব নিয়োগের পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বোর্ডের চুড়ান্ত ফলাফলের বিবরণের অনুলিপি প্রদানের জন্য উপাধ্যক্ষ আতাউর রহমান ২০১৯ সালে তথ্য কমিশনে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করেন। বার বার শুনানী শেষে দেশের প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, তথ্য কমিশনার ডক্টর আব্দুর মালেক ও সুরাইয়া বেগম এনডিসি তথ্য চাহিদা মাফিক তথ্য প্রদানের জন্য ছবিরণ-গুলজান স্কুল এন্ড কলেজে বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূর নবীকে নিদের্শ দিলেও আজ পর্যন্ত তিনি কোন তথ্য প্রদান করেননি। এসব বিষয়ে মামলা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান শিক্ষক তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন। আতাউর রহমান বলেন, তিনি ও তার খালাতো ভাই প্রফেসর ড. আব্দুস সামাদ তাদের মা ছবিরণ ও গুলজানের নামে এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্তির সময় থেকে একের পর এক অবৈধ নিয়োগ ও কমিটি গঠন শুরু হয়।
এসব বিষয়ে প্রতিবাদ করায় এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী নিজের পিতা হত্যাসহ চারটি মামলার জামিনে থাকা আসামী দুর্ধর্ষ ডাকাত সদস্য মাহবুর রহমানকে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে দিয়ে এখন প্রতিষ্ঠাতাকেই প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়া হয় না। এসব বিষয়ে তদন্ত হলে তদন্ত কমিটির সামনে সবাই যেন যেতে না পারে এজন্য প্রকাশ্যে বাঁধা দেয়া হয়। তারপর সেই তদন্ত রিপোর্টও প্রকাশ করা হয়নি। তথ্য কমিশনে আবেদন করেও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া প্রধান শিক্ষক, সেই প্রধান শিক্ষকের দেয়া অন্য নিয়োগ ও কমিটি বাতিলের দাবী জানিয়েছেন। ১২ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা না থাকলেও কিভাবে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন জানতে চাইলে বর্তমান প্রধান শিক্ষক নূর নবী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি আগে এমপিও ভুক্ত ছিল না, তাই এই নিয়ম এখানে প্রযোজ্য নয়। পুরো অভিজ্ঞতা না থাকলেও তার শিক্ষক নিবন্ধন ছিল বলে তিনি দাবী করেন। একজন দ্বৈত নাগরিককে কিভাবে সভাপতি করেছেন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ও আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক আব্দুস সোবহান বলেছেন, অভিযোগকারী মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ আতাউর রহমান মিথ্যাচার করছেন, প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করার অপচেষ্ঠা করছেন। শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কোন দ্বৈত নাগরিকের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার সুযোগ না থাকলেও তিনি কিভাবে সভাপতি হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন নিয়মের কথা তার জানা নেই।
নাটোর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আখতার হোসেন বলেন, ঘটনার সময় তিনি নাটোরে কর্মরত না থাকলেও বিষয়গুলো তিনি শুনেছেন। নানা ব্যস্ততার কারণে ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনো যেতে পারেননি। তবে দ্রুত গিয়ে বিষয় গুলো জেনে কোন করণিয় থাকলে তা করার চেষ্টা করবেন।