নাটোরে প্রবাসীর স্ত্রীর পরকিয়ার ঘটনায় গ্রাম্য সালিশে বিচার করে মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজের জন্য প্রবাসীর স্ত্রীর এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান সহ গ্রাম প্রধানরা। এ সময় সালিশে উপস্থিত হতে দেরি হওয়ায় ওই নারীর বাবাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। তবে স্থানীয় চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান জরিমানার টাকার কথা স্বীকার করে বলেন ঘটনাটি এমন নয় ওই নারীর প্রবাসী স্বামী নিজেই মাদ্রাসার উন্নয়নে টাকা দিয়েছেন। এদিকে এমন ঘটনা শুনে পুলিশ দুইজন গ্রাম প্রধানকে আটক করেছে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, নাটোর সদর উপজেলার তেবারিয়া ইউনিয়ের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে পাশ্ববর্তী জেলার পুঠিয়ার একটি ছেলের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই পরকিয়া সম্পর্ক চলছিল। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে এলাকাবাসী তা হাতেনাতে ধরার জন্য অনেকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়ে আসছিলো। এরই এক পর্যায়ে গত ২৯ মে মধ্যে রাতে প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়ীতে তার পরকিয়া প্রেমিক অমর কুমার এলে তাকে ঘরে ঢুকিয়ে নেয়।
এরপর বিষয়টি এলাকাবাসী জানতে পারলে তারা অমর কুমারকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অমর কুমারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন ৩০ মে প্রবাসীর স্ত্রী তাকে ধর্ষন করা করা হয়েছে বলে থানায় অমর কুমারকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর গত মঙ্গলবার রাতে এলাকার চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান সহ গ্রাম প্রধানরা প্রবাসীর স্ত্রীর পরকিয়ার ঘটনায় একটি গ্রাম্য সালিশ করেন। সেখানে প্রবাসীর স্ত্রীকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুই গ্রাম প্রধানকে তারা আটক করে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং তেবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর আলী প্রধান বলেন, ‘ওই নারীর অপরাধের কারণে তার দুবাই প্রবাসী স্বামী এক লাখ টাকা জরিমানা দিতে চান। সেই টাকার কথাই সালিশে বলা হয়েছে। ওই প্রবাসীর স্ত্রীর জরিমানার টাকা অন্য কোন ভাবে খরচ করা হবেনা। সেই টাকা দিয়ে এলাকার একটি মাদ্রাসায় টয়লেট নির্মান করা হবে। জরিমানার টাকার অর্ধেক টাকার ইট কিনা হবে এবং বাকী টাকা নির্মান কাজেই খরচ করা হবে। এটা ওই নারীর অপরাধের শাস্তি। এমন বিচার হলে এলাকা থেকে এই ধরনের নোংড়া অপরাধ দুর হবে। এছাড়াও ওই নারীর স্বামী মোবাইল ফোনে তাকে জানিয়েছেন যে, সে প্রবাস জীবনে যা কিছু সঞ্চয় করেছেন তা তার স্ত্রীর কাছেই গচ্ছিত রেখেছেন। তার নামেই কিছু জমি কিনেছেন।
এখন এমন ঘটনায় তাকে তালাক দিলে তার সংসার শেষ হয়ে যাবে। এছাড়াও তার সন্তানরা রয়েছে তাদের দেখাশোনা করাও সমস্যা হবে। সেকারনে তার স্ত্রীর অপরাধের শাস্তি হিসেবে সে এই টাকা মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ধর্ষণ মামলার সালিশ করার এখতিয়ার কারো নেই। এটা আদালতের বিষয়। তিনি রাতে সংবাদ পেয়ে সালিশে উপস্থিত গ্রাম প্রধানদের আটকের নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রুহুল আমিন ও সোবহান আলী নামে দুই প্রধানকে আটক করে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।