আসন্ন ২০২০ শিক্ষা বছরের প্রথম দিনে নাটোর জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের চার লাখ তিন হাজার শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে যাবে ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার নতুন পাঠ্য বই। প্রস্তুতি হিসাবে বর্তমানে জেলা শিক্ষা অফিস এবং সাতটি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট ২ হাজার ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বা তাদের প্রতিনিধিদের নিকট ইতোমধ্যে এসব বই বিতরণ কার্যক্রম প্রায় শেষ হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় বিভিন্ন পর্যায়ের মোট এক হাজার ৫১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ ৮৯ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থীর জন্য প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্য বইয়ের চাহিদা আট লাখ ৯৫ হাজার ৫০ কপি। চাহিদার শতভাগ বই ঢাকা থেকে জেলার সকল উপজেলা পর্যায়ে অনেক আগেই পৌঁছে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে মধ্য ডিসেম্বর থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা তাদের প্রতিনিধিদের নিকট চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্য বই বিতরণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মাদ্রাসা, কারিগরিসহ মোট ৪৯৬টি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ে আসন্ন শিক্ষাবর্ষে ইবতেদায়ী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই লাখ তের হাজার ৩৯০ জন। এসব শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুযায়ী ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৫ কপি পাঠ্য বইয়ের সমূদয় বই অনেক আগেই ঢাকা থেকে নাটোরে পৌঁছে যায়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রধানের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ভোকেশনাল পর্যায়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্য বই জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম আগামীকাল রোববার শেষ হবে।
নাটোর সদর উপজেলার শংকরভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা নার্গিস জানান, স্কুলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সকল পাঠ্য বই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে সংগ্রহ করেছেন গত সপ্তাহে। তিনি আশা করছেন বছরের প্রথম দিনে স্কুলে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে পারবেন।
নাটোর সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইতোমধ্যে উপজেলার সকল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা তাঁর প্রতিনিধিবৃন্দ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে পর্যায়ক্রমে বই সংগ্রহ করেছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে বই বিতরণ ব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বড়াইগ্রামের রয়নাভরট সরকার বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অহিদুল হক।
জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, আগামী ১ জানুয়ারী ২০২০ বুধবার বই উৎসবের দিন বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি অভিভাবক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সমাবেশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই হস্তান্তর করা হবে। একই আনুষ্ঠানিকতা ও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এরশাদ উদ্দিন আহমেদ।
নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহমুদুল হক জানায়, নভেম্বরে জেএসসি পরীক্ষা শেষ করে অনেক দিন ধরে নতুন বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। এক সাথে অনেকগুলো নতুন ক্লাসের বই হাতে পাওয়া অনন্য। বছরের প্রথম দিনে বইয়ের ব্যবস্থা করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানায় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনা।
নাটোর সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানান, আগামী ১ জানুয়ারী নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে যৌথভাবে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বই তুলে দেয়া হবে। জেলা প্রশাসকের উপস্থিতে বই দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, সরকার একই সাথে সব বই একই দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এটি একটি অনন্য উদ্যোগ। শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে পড়াশুনা করে যোগ্য নাগরিক হয়ে গড়ে উঠলে সরকারের এই উদ্যোগ অর্থবহ হবে।