শহিদুজ্জামান সুমন। পেশায় একজন শিক্ষক। তার বাড়ী পটুয়াখালীর বাউফলের উত্তর বনকাজল গ্রামে। বাবার নাম মৃত আব্দুর ছাত্তার মিয়া। তার কর্মক্ষেত্র ছিলো নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে। সেখানে তিনি সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পড়াতেন ইরেজী বিষয়। আর পেশাগত কারনে তিনি ওই এলাকাতেই বাস করতেন। কর্মক্ষেত্রে সাফল্য পান তিনি। সেই সাফল্য পেয়ে তিনি সংসার জীবনে পা রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন তার স্বজনরা। সুমনের পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয় তাদের পাশ্ববর্তি গ্রাম বাউফলের দশমিনা এলাকার লামিয়া জেবিনের সাথে সুমনের বিয়ে দিবেন। ঠিক সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই পরিবারের সম্মতিতে গতকাল শুক্রবার রাতে সুমনের নিজ বাড়ীতে লামিয়া জেবিনের সাথে সুমনের বিয়ের কার্য সম্পাদন হয়। উভয় পরিবারের আত্মীয় স্বজন উপস্থিত হয় তাদের বিয়েতে। শুক্রবার বিয়ের পর আজ শনিবার রাতে শ্বশুর শাশুড়ীকে বাসে তুলে দেওয়ার জন্য সুমন সহ তার মামা শ্বশুর জাকির হোসেন আসেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাইপাসে। সেখান থেকে শ্বশুর-শাশুড়িকে বরিশালগামী তুহিন পরিবহনে তুলে দেন সুমন। বাসে তুলে দিয়ে মামা শ্বশুরের সাথে বাড়ীর পথে ফিরছিলেন। সে সময় সুমন তার নববধু স্ত্রী লামিয়া জেবিনের সাথে মোবাইল ফোনে জানাচ্ছিলেন তার মা বাবাকে বাসে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় পিছন দিক থেকে কুষ্টিয়াগামী অজ্ঞাত একটি ট্রাক তাদের দুজনকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। আর এতেই ঘটনাস্থলেই জীবন প্রদীপ নিভে যায় শিক্ষক সুমনের। গুরুতর আহত হয় মামা শ্বশুর জাকির হোসেন। ঘটনাটি স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে আহত অবস্থায় জাকির হোসেনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে এবং পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুমনের মরদেহটি উদ্ধার করে। পরে পরিচয় সনাক্ত করে সুমনের স্বজনদের ঘটনাটি জানালে সেখানেও এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা দেয়। পরে শিক্ষক সুমনের মরদেহ নিতে আসে এলাকার লোকজন সহ আত্মীয় স্বজনরা। স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সুমনের স্ত্রী লামিয়া জেবিন জ্ঞান হারিয়ে পড়েন। কিছুক্ষন পর পর তিনি মূর্ছা যাচ্ছেন।
এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বনপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ব্যক্তির খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। আহত জাকির হোসেন শংকামুক্ত রয়েছে বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। বর্তমানে অজ্ঞাত ট্রাকটি চিহ্নিত করতে পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যেভাবেই হোক ট্রাকটি সহ তার চালক ও চালকের সহকারীকে আটক করা হবে।