নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরে ১৫ হাজার টাকা ঘুস নিয়েও মাদক মামলায় চালান দিলেন আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আসলাম আলী মন্ডল। বৃহস্পতিবার রাতে বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুর মুলাডুলি গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। পরে শুক্রবার সকালে ৬ লিটার দেশী মদ সহ আটক দেখিয়ে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয়। আটককৃত আলাউদ্দিন বড়াইগ্রামের রাজাপুর মুলাডুলি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিনই নাটোর থেকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আসলাম আলী মন্ডল ও সিপাহী মোঃ বিপ্লব সহ আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ পরিচয় দিয়ে মানুষকে আটক করে। পরে তাদের কাছে থাকা মাদক দেখিয়ে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর ভয় দেখায় টাকা দাবী করে। টাকা দিলে ছেড়ে দেয় আর টাকা দিতে না পারলে মামলা দেয়। এসব টাকা নগদ সহ সিপাহী বিপ্লবের মোবাইল ফোনের বিকাশ নম্বরে দিতে হয়। এছাড়াও এলাকায় যারা মাদক ব্যাবসা করে তাদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন তারা। নিয়মিত চাঁদা দেয় জন্য মাদক ব্যাবসায়ীদের কিছুই বলেনা। এতে করে মাদক ব্যাবসায়ীরা বুক ফুলিয়ে অবৈধ ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে ইন্সপেক্টর আসলাম আলী মন্ডলের বড় স্যারের সাথে কথা বলারর জন্য মোবাইল নম্বর চাইল আসলাম ও বিপ্লব বলে স্যার সব জানে। সেখানে যোগাযোগ করে কোন লাভ হবেনা। বরং টাকা দিতে থাকবেন তাহলে ভালো থাকবেন। টাকা না দিলেই ঝামেলায় জরাবেন। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসের এমন হুমকি থেকে রেহায় পেতে চায় স্থানীয়রা। আটককৃত আলাউদ্দিনের ছেলে সাদ্দাম ও পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতিবেশীর সাথে বিরোধের জের ধরে মাদক মামলায় জেল খাটানোর হুমকি দিয়েছিল কয়েকবার প্রতিবেশী তাদের। এনিয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এস আই মতিয়ার রহমান নামে একজন তাদের পরিবারের যেকোন একজনকে মাদক মামলায় আটক করে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছিল।
এরই জের ধরে গতরাতে আলাউদ্দিনকে ধরে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেন ইন্সপেক্টর আসলাম আলী মন্ডল। এ সময় তার চাহিদামত টাকা দিতে অস্বীকার করলে গাড়ীতে থাকা মদের জারকিন দেখিয়ে মামলার হুমকি দেয়। পরে ১৫ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানায়। ১৫ হাজার টাকায় ঘটনার রফা করা হয়। কাছে নগদ ১৫ হাজার টাকা না থাকায় বনপাড়া পৌরসভার সামনে টাকা সংগ্রহ করে ইন্সপেক্টর আসলামের উপস্থিতিতে সিপাহী বিপ্লবের কাছে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ১৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও আলাউদ্দিনকে ছেড়ে দেয়নি। ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে ইন্সপেক্টর আসলাম বলেন এতো কম টাকায় ছেড়ে দেওয়া যাবেনা। ছোট খাটো একটা মাদক সেবনের মামলা দিচ্ছি আদালতে ক্ষমা চেয়ে জামিনে বের হয়ে আসবে। এরপর সত্যি সত্যি মাদক সেবনের মামলা দিয়ে আদালতে প্রেরণ করে দেয়। এরপর আদালত থেকে কারাগারে। তারা এই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে অপরাধীর বিচার দাবী করেন।
এ বিষয়ে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রর অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর আসলাম আলী মন্ডলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুলাডুলি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এসময় আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় ৬ লিটার দেশী মদ নিয়ে চলাফেরা করছিল। পরে আলাউদ্দিনকে আটক করে তার দেহ তল্লাশী করে ৬ লিটার দেশী মদ উদ্ধার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ “করা হয়েছে। এসময় ১৫ হাজার টাকা ঘুস নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে সাংবাদিককে তার অফিসে এসে কথা বলতে বলেন এবং পরে তিনি বলেন তিনি কারো কাছ থেকে টাকা নেন নাই। এ সময় সিপাহী বিপ্লবের হাতে তার উপস্থিতে টাকা দেওয়ার কথা বললে তিনি ফোন লাইন কেটে দেন।
এসব বিষয় নিয়ে জানতে নাটোর জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিস কার্যালয়ে সরেজমিনে গেলে ইন্সপেক্টর আসলাম উদ্দিন সহ ক এবং খ সার্কেলের আরো অনেক অপকর্মের তথ্য পাওয়া যায়।
এসব বিষয়ে জানতে নাটোর জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অফিসে উপ পরিচালক আলমগীর হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গতরাতে বড়াইগ্রাম থেকে মাদক সহ একজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন না। ইন্সপেক্টর আসলাম এখন অভিযানে রয়েছে। তার সাথে কথা বলে ঘটনাটি জানবেন তিনি। যদি টাকা নেওয়ার কোন ঘটনা ঘটে তাহলে তিনি বিষয়টি নিয়ে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবেন।