কৃষি বান্ধব বর্তমান সরকার ডিএপি সারের মূল্য কেজি প্রতি ৯ টাকা হ্রাস করেছে। এরফলে জেলার কৃষকদের চলতি রবি মৌসুমের শস্য উৎপাদনে প্রায় ১১ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। বছর শেষে সাশ্রয়ের পরিমাণ হবে ২০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ইউরিয়া সার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার রোধ করে এবং ভারসাম্যপূর্ণ পরিমিত সার ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন কৃষকরা। সুরক্ষা পাবে জমির উর্ব্বরতা শক্তি।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সরকার ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ডিএপি( ডাই এমোনিয়া ফসফেট) সারের কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে প্রতি কেজি ১৬ টাকা নির্ধারণ করে। ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ডিএপি সারে ২০ কেজি ইউরিয়া এবং ৫০ কেজি টিএসপি সারের সমপরিমাণ পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। যে কোন শস্য রোপনের সময় একবার ডিএপি সার ব্যবহার করতে হয়। গাছের সুস্থ্যতার জন্যে এই সার অত্যাবশ্যকীয়-যা শেকড় বৃদ্ধি, কান্ড মজবুত এবং কুশি গজাতে সহায়ক। ডিএপি সারে ইউরিয়া ও পটাশের উপাদান বিদ্যমান থাকায় ইউরিয়ার লাগামহীন ব্যবহার রোধ হবে এবং পটাশের উপস্থিতির কারনে সারের ব্যবহার হবে ভারসাম্যপূর্ণ। সারের পরিমিত ব্যবহারে অভ্যস্ত হবেন কৃষকরা। ফলাফল হবে- জমির উর্ব্বরতা শক্তি বাড়বে, কমবে শস্য উৎপাদনে শ্রমের ব্যয়। সার বীজ মনিটরিং জেলা কমিটি জেলার শস্য উৎপাদনে ডিএপি সারের বাৎসরিক চাহিদা নির্ধারণ করেছে ২২ হাজার ৪৫৭ টন। এরমধ্যে চলতি রবি মৌসুমে কৃষকরা ব্যবহার করছেন সাড়ে ১২ হাজার টন। কেজি প্রতি ৯ টাকা দাম কমার ফলে সাড়ে ১২ হাজার টন সার কিনতে রবি মৌসুমে কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে ১১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। রবি মৌসুমে জেলার কৃষকরা ৫৬ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছেন। এছাড়াও গম, ভুট্টা, সব্জি, সরিষা, রসুন, মসুর, পেঁয়াজ, মরিচ, কালোজিরা, ধনিয়াসহ অন্যান্য শস্য উৎপাদনে আবাদী জমির পরিমাণ অন্তত সোয়া এক লক্ষ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে কৃষকরা ডিএপি সার ব্যবহার করেন অন্তত ১০০ কেজি। অর্থাৎ বিঘা প্রতি ডিএপি সারের ব্যবহার প্রায় ১৪ কেজি। অর্থাৎ একবিঘা জমি আবাদে ডিএপি সার ব্যবহারে কৃষকের সাশ্রয় হচ্ছে সোয়াশ’ টাকা।
শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার কুমিড়া গ্রামের আদর্শ কৃষক জুলফিকার আনাম তারা বলেন, অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয় পাওয়ার পাশাপাশি আমরা জমির চাহিদা পরিমাপ করে সার ব্যবহার করলে জমির উর্ব্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাবে। বারবার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই বলে অনায়াসে একবার এই সার ব্যবহার করা যাবে। ফলে লেবার খরচও কমবে।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদুল ইসলাম জানান, ডিএপি সারের দাম কমাতে শুধু সার ক্রয়ের ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিকভাবেই কৃষকরা সুবিধা পাবেন তা নয়, সার প্রয়োগে পরিমিত ব্যবহার এবং লেবার খরচও কমে যাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত কৃষি ও কৃষকের জন্যে খুবই ইতিবাচক। নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত সরকার বলেন, ডিএপি সারের মূল্য হ্রাসের ফলে কৃষকরা পরিমিত সার ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। ফলে ক্রয় সুবিধা ও পরিমিত ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে তাঁরা আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন। পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা হবে। মাটি বিবেচনা করে পরিমিত সারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে জেলার ১৬৭টি কৃষি ব্লকে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও এই কৃষি কর্মকর্তা জানান।