নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরে এতিম দৌহিত্রদের বঞ্চিত করতে তার সম্পত্তি মেয়েদের নামে হেবা করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার নিজের একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর মেয়েদের প্ররোচনায় তিনি এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে। তার বংশীয় লোকজন ছাড়াও এলাকার যারাই এতিমদের বঞ্চিত না করার কথা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধেই ৫/৬ টি করে হয়রানীমুলক মামলা দিয়ে দমাতে চেষ্টা করেছেন দারোগা ইউসুফ আলী। তবে আইনজ্ঞরা বলছেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তার (অবঃ) এ কাজ মোটেও আইন সম্মত নয়। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার মাহমুদপুর দক্ষিণ পাড়া গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, এরশাদ আলী খলিফার মৃত্যুর পর বিঘা পাঁচেক সম্পত্তির মালিক হন দারোগা ইউসুফ আলী। তার বংশীয় লোকজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা জানান, একমাত্র পুত্র সন্তান শফিকুল ইসলাম ও তিন কন্যা শেফালী পারভীন, লাভলী পারভীন ও ফারজানা পারভীনের বাবা দারোগা ইউসুফ আলী পুলিশ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। চাকুরী জীবনে বিভিন্ন থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময়ে অগাধ সম্পদের মালিক বনে যান ইউসুফ আলী দারোগা। এর মধ্যে রয়েছে রংপুরে একটি বাড়ি ও মার্কেট, রাজশাহীতে একটি বাড়ি, ঢাকার বাড়ি। এছাড়া নিজ জেলা নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মাহমুদপুর ও বেড় গঙ্গারামপুর এলাকায় নিজ নামে ও স্ত্রী রাবেয়ার নামে লিচু বাগান ও ফসলী জমি, গুরুদাসপুরে ও চাঁচকৈড় বাজারে গদি ঘর ও ভিটা জমি সহ প্রায় দেড় শতাধিক বিঘা জমির মালিক হন। এমনকি তার জমির পাশে খাস জমিতে যেসব অসহায় মানুষ বাড়ি করে আছেন তাদেরকে উৎখাত করে ওই খাস জমি দখলের চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। ইউসুফ আালী দারোগার একমাত্র ছেলে সন্তান শফিকুল ইসলাম শিবগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তিন দিনের জ্বরে মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুও রহস্যজনক বলে মনে করেন ইউসুফ আলী দারোগার বংশীয় লোকজন। ইউসুফ আলীর পুত্রবধু (শফিকুল ইসলামের স্ত্রী) ফরিদা পারভীন বর্তমানে ঢাকায় বসবাস করেন। তিনি জানান, বিবাহিত জীবনে তার স্বামীর মৃত্যুর পূর্বে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন যার বয়স বর্তমানে প্রায় ৬ বছর। কন্যার নাম শেরিন শিমরাহ শাবাহাত রাইম। এছাড়া শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর সময় ফরিদা পারভীন গর্ভবতী ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তার একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয় যার নাম রাখেন শাফাকাত শুফাইক রোরি (সাড়ে ৩ বছর)। গত আড়াই বছর আগে তার শ্বাশুড়ী রাবেয়া খাতুনও (শ্বশুর ইউসুফ আালীর স্ত্রী) মৃত্যু বরণ করেন। রাবেয়া খাতুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে পুত্রবধু ফরিদা পারভীন তার পুত্র-কন্যাকে নিয়ে তার শ্বশুরালয়ে আসেন। কিন্তু দারোগা ইউসুফ আলী তাদেরকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেননি। তার শ্বশুর ইউসুফ আলী তার তিন মেয়ের নামে সম্পত্তি হেবা দলিল করে দিয়েছেন। মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান মতে যা গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি তিনি তার স্বামী শফিকুল ইসলামের নিজ নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তিতেও যেতে দেন না। বাড়িতেও তালা মেরে রেখেছেন যাতে তিনি সেখানে উঠতে না পারেন। তিনি তার সন্তানদের প্রাপ্য সম্পত্তি বুঝে দেওয়ার দাবী জানান।
ইউসুফ আলীর ভাতিজা রবিউল ইসলাম খলিফা, নাতি সোহেল আহমেদ মুন্না, ভাগ্নে মহসিন আলী, খাস জমিতে বসবাসকারী আবুল কালামসহ প্রতিবেশীদের অনেকেই জানান, তারা এতিম রাইমা ও রোরিকে বঞ্চিত না করতে বারবার ইউসুফ আলীকে বলেছেন। কিন্তু তিনি সেসব কথায় কর্ণপাত না করে বরং তাদের বিরুদ্ধে ৫/৬ টি করে হয়রানীমুলক মামলা দিয়েছেন। তারা জানান, মেয়েদের প্ররোচনায় দারোগা ইউসুফ এতিম বাচ্চাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে তার মেয়েদের হেবা করে দিয়েছেন । এমনকি তার ছেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার (শফিকুলের) নিজ নামে ক্রয়কৃত সম্পত্তিও তিনি নিজ দখলে রেখে সে জমির আয় থেকে এতিমদের বঞ্চিত করছেন। তারা জানান,ইউসুফ আলী দারোগা বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনকালে অবৈধ পথে অনেক অর্থ উপার্জন করেছেন। তাদের প্রশ্ন অবধৈ উপায় ছাড়া একজন দারোগা হয়ে কিভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন ? তাদের দাবি এতিম বাচ্চাদের প্রাপ্য সম্পত্তি তাদের বুঝে দেওয়া হোক এবং দারোগা ইউসুফ আলীর অবৈধ সম্পদের হিসাব নেওয়া হোক। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউসুফ আলীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,তার কিছু সম্পত্তি মেয়েদের নামে হেবা দলিল করে দিয়েছেন বটে। কিন্তু তার নাতি নাতনি অর্থাৎ পুত্রের ঘরের দুই সন্তানকে তিনি কখনোই বঞ্চিত করবেন না। তিনি তাদের প্রাপ্য অংশ তিনি তাদের দেবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে নাটোর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট আইনজীবী প্রসাদ কুমার তালুকদার জানান, স্ত্রী মারা গেলে তার সম্পত্তির সিকি অংশের মালিক হবেন তার স্বামী। তার বেশী তিনি কাউকে দিতে পারেন না। এছাড়া যেহেতু ওই মহিলার মৃত্যুর পূর্বে তার পুত্র মারা যান তাহলে পুত্রের যতটুকু সম্পত্তি পাবার কথা সেটুকু তার ছেলের পুত্র-কন্যা পাবেন। এর বেশী কেউ যদি করে থাকেন তাহলে তা’ হবে অবৈধ।