একসময় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ছিল দলবেঁধে মাছ ধরা। গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ দিনক্ষণ ঠিক করে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠতো। কালের বিবর্তনে গ্রামীণ অন্যান্য ঐতিহ্যের মতো মাছ ধরা উৎসবটাও বিলুপ্ত প্রায়। গ্রামীণ ঐতিহ্য ফিরিয়ে আসতে নাটোরের গুরুদাসপুরে হয়ে গেল পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসব। রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার আত্রাই নদের কালাকান্দর মহাশ্বশান থেকে শুরু হয়ে চাঁচকৈড় ত্রি-মোহনা (আত্রাই, নন্দকুঁজা ও গুমানী নদীর মোহনা) পর্যন্ত এই উৎসব চলে। এতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মাছ শিকারী অংশ নেন। মাছ ধরা দেখতে নদের দুই পাড়ে উৎসুক জনতা ভীড় করে।
স্থানীয়রা জানান, একপ্রকার বাঁশের তৈরী উপকরণ দিয়ে তৈরী করা হয় পলো। সেই পলো নিয়ে দিনক্ষণ ও মাছ ধরার এলাকা ঠিক করে দলবেঁধে মাছ ধরতে যান শিকারীরা। তাতে একজনের নের্তৃত্ব মেনে অন্যরা মেতে উঠেন পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসবে। প্রতিবছর শুকনো মৌশুমে খাল, বিল ও নদীর পানি কোমর পর্যন্ত পৌঁছালে এই পলো উৎসব শুরু হয়। বিশেষ করে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ থেকে শুরু করে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন বিল, নদী জলাশয়ে উৎসবের আয়োজন চলে।
উৎসবে অংশ নিতে আসা কাছিকাটা গ্রামের সজিব হোসেন জানান, পলো দিয়ে মাছ ধরতে একটা অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। কলেজ বন্ধ তাই বড়দের সাথে মাছ ধরার উৎসবে যোগ দিয়েছি। বোয়াল, শোল, মৃগেল, কাতলাসহ বিভিন্ন মিঠাপানির মাছ পাওয়া গেছে।
মাছ উৎসবে নের্তৃত্ব দেয়া ছকির উদ্দিন জানান, আমরা প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে দলবেঁধে মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠি। বাপ-দাদার আমল থেকে এই উৎসব পালন করে আসছি। সেই সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান, আমাদের চমৎকার একটি গ্রামীণ ঐতিহ্য হলো মাছ ধরা উৎসব। দলবেঁধে মাছ ধরাটা গ্রাম বাংলার সহজাত সম্প্রতিকে ধারণ করে।