নারায়ণগঞ্জে চার বয়সের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশী তরুণের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধায় সাত দিন ধরে থানায় মামলা করতে পারেনি শিশুটির পরিবার।
শত শত গ্রামবাসীর সামনে ওই প্রভাবশালী মহল তিন দফায় ধর্ষিতা শিশু ও তার পরিবারকে ডেকে এনে দুই লাখ টাকায় মীমাংসার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত শিশুটির পরিবার গ্রাম থেকে পালিয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহায়তায় থানায় মামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনার আট দিন পর শিশুটির মায়ের দায়ের করা মামলায় মঙ্গলবার সকালে সানি আলম (২২) নামে এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, সানি আলম পেশায় একজন বিদ্যুৎ মিস্ত্রি। সে শিশুটিকে খেলার কথা বলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ ঘটনার পর শিশুটি ফিরে এসে তাকে বাবা মায়ের কাছে এ কথা জানালে স্থানীয় ইউপি ওয়ার্ড সদস্য উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলামের কাছে ছুটে যান অভিভাবকরা।
এ ঘটনায় মামলা করতে না দিয়ে গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক লোক ডেকে সালিসের মাধ্যমে বিচারের চেষ্টা করেন ইউপি সাদস্য সাইফুল ইসলাম। ভুক্তভোগী পরিবারটি বিচার না মেনে বাড়ি চলে এলে পরদিন সকালে ফের মীমাংসার চেষ্টা করেন ওই ওয়ার্ড সদস্য ও গ্রামের মাতবর বাদল হোসেন।
শিশুটির দাদি জানান, সালিস ছেড়ে চলে আসার পর থকেই তাদের একপ্রকার নজরবন্দি করে ফেলা হয়। কোনোভাবেই তাদের গ্রাম থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছিল না। বিচার না মানলে ভবিষ্যতে দেখে নেয়াসহ তাদের পরিবারের প্রয়োজনে পাশে না থাকার হুমকি দিয়েছেন সালিসের বিচারকরা। অবশেষে সোমবার সকালে পালিয়ে এসে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনা সম্পর্কে জানান তিনি।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুসরাত জানান, শিশুটির অভিভাবকদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ পেয়ে একজন আনসার সদস্যসহ উপজেলার দুই কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠাই। তারা ওই যুবককে খুঁজে না পেয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। মঙ্গলবার সকালে সেই ওয়ার্ড সদস্যসহ গ্রামের কিছু মুরব্বি অভিযুক্ত সানিকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে উপজেলা কার্যালয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সালিস বসিয়ে ২ লাখ টাকায় এই ঘটনা মীমাংসার বিষয়ে শুনেছেন বলে জানান তিনি।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পরও সালিসে অপমান ও হুমকির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ধর্ষিতা শিশুটির পরিবার। স্বজনরা জানান, সোমবার রাতে প্রায় তিন শতাধিক গ্রামবাসীর সামনে তৃতীয়বারের মতো তাদের ডেকে আনা হয়। রাত ২টা পর্যন্ত মীমাংসার চেষ্টা চলে। সেখানে ২ লাখ টাকায় ঘটনার মীমাংসার প্রস্তাব দেন ওয়ার্ড সদস্য সাইফুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে মামলা গ্রহণ করেছি। আমরা অভিযুক্ত আসামিকেও গ্রেফতার করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।