ডেস্ক নিউজ
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তুলকালাম কা- ঘটানো হয়েছে। মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে যাতে নাশকতা চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে। নাশকতা ও নৈরাজ্য ঠেকাতে সতর্ক অবস্থায় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এমনকি পুলিশের দায়িত্বশীল যেসব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন, তাও বাতিল করে তাদের দ্রুত নিজ নিজ কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এ রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়। এর পরই পুলিশ, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র্যাব) অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটে বাড়তি সতর্কতা নেয়া শুরু হয়। বিএনপিসহ তাদের সমমনা গোষ্ঠীর বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করে আসার ধারাবাহিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি ঘিরে কেউ যেন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সঙ্কট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গুজব বা অসত্য তথ্য ছড়ানোর কারণে বিশৃঙ্খলার বিষয়টিতেও নজর রাখা হচ্ছে। দেশের সব থানাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্থাপনা ঘিরে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি এবং মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এ গুজবকে কেন্দ্র করে যাতে কেউ নাশকতা করতে না পারে সেজন্য পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে বলা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে ওয়ারলেসের মাধ্যমে মৌখিক এ বার্তা দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক অতিরিক্ত উপকমিশনার সমমর্যাদার কর্মকর্তা বলেছেন, কেউ যাতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এই বার্তা পেয়েই সদর দফতর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে মৌখিকভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা ছুটিতে আছেন তাদের ছুটি ২৩ নবেম্বর থেকে বাতিল করা হয়েছে। তাদের সবাইকে ২৪ নবেম্বরের মধ্যে কর্মস্থলে ফেরার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের এক অফিস আদেশে বলা হয়েছে, মাতৃত্বকালীন, অন্তঃসত্ত্বা জনিত ও শারীরিক অসুস্থতা ছাড়া অন্য যেসব কারণে কর্মকর্তারা ছুটি নিয়েছেন তাদের বুধবারের মধ্যে কর্মস্থলে ফিরতে হবে। কেউ বুধবার ফিরে না এলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার, সন্ধ্যার দিকে সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তবে চিকিৎসকরা রক্ত দেয়ার পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে তার শরীর। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এ গুজবকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে থাকার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টার পর খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান রাত ২টায় গণমাধ্যমে বলেছেন, চেয়ারপার্সনের হিমোগ্লোবিন, রক্তচাপ কমে গিয়েছিল ইন্টারনাল হেমোরেজের কারণে। ডায়াবেটিস আনকন্ট্রোল্ড। রক্ত দিতে হয়েছে আবার। কয়েকদিন রক্ত লাগেনি।
এভারকেয়ার হাসপাতালের সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রক্ত দেয়ার সময় প্রথমে রক্ত যাচ্ছিল না। তখনই মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে পরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত দেয়া হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিউটি অফিসার মাসুম মঙ্গলবার (২৩ নবেম্বর) দিবাগত রাত ২টা ২২ মিনিটে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন ভাল আছেন। আপনারা যে খবরটি পেয়েছেন, সেটা গুজব। কিন্ত ততক্ষণে কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মৃত্যু গুজব ছড়িয়ে দেয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের( ডিএমপি) এক উপকমিশনার বলেন, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পুলিশের সকল ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাও সতর্ক থাকার নির্দেশনা পেয়েছেন। সতর্কতার অংশ হিসেবে কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পর্যন্ত কর্মকর্তাদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পুলিশের সকল ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, একটি মহল দেশজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি ঘিরে কেউ যেন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সঙ্কট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গুজব বা অসত্য তথ্য ছড়ানোর কারণে বিশৃঙ্খলার বিষয়টিতেও নজর রাখা হচ্ছে। খালেদা জিয়াকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে দেশজুড়ে নাশকতার সৃষ্টি করতে পারে একটি মহল। হানাহানির মাধ্যমে দেশজুড়ে দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা চলছে। একটি মহল ইস্যু সৃষ্টি করে বড় ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যে কারণে এই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এমন আশঙ্কায় মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর পরই পুলিশসহ সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটে বাড়তি সতর্কতা নেয়া শুরু হয়।
বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে ৮ দিনের মাঠের কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে। বুধবার, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক যৌথসভা শেষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন, মিছিল ইত্যাদি। এসব কর্মসূচীর নামে যাতে মানুষজনের জানমাল ও নিরাপত্তা বিঘিœত না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্য রাতের পর থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে নানা রকম গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে খালেদা জিয়া মৃত্যু সম্পর্কেও। পরবর্তীতে দেখা গেছে, এই গুজবটি সত্যি নয়। এক ধরনের গুজব সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা এবং অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য তৎপর একটি মহল। এর বাইরে বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে কেন্দ্র করে রাজপথে বিএনপি আস্তে আস্তে সরব হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার দাবিতে বিএনপি একের পর এক বিভিন্ন কর্মসূচী দিচ্ছে। এই কর্মসূচীর পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে দিয়ে বিবৃতি দেয়ানো হচ্ছে। সাংস্কৃতিক কর্মীদের বিবৃতির পর সাংবাদিকদের একটি অংশের পক্ষ থেকেও বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতির জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এসব দাবি-দাওয়ার পরও সরকার এখন পর্যন্ত তার অবস্থানের কোন পরিবর্তন করেনি। বরং আইনমন্ত্রী এখন পর্যন্ত তার আগের অবস্থানেই অটল আছেন। তিনি বলেছেন যে, বর্তমান বাস্তবতায় বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া হলেই লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া তার সাম্প্রতিক সময়ে যে ষড়যন্ত্র সেগুলোকে আরও বাড়াবেন এবং সরকার বিরোধী আন্দোলন আরও জোরদার করার চেষ্টা করতে পারে। সবকিছু সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা হতে পারে। অশুভ মহলের নীলনক্সা অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোন ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া এ্যান্ড পিআর) মোঃ কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, দেশে এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি রেড এ্যালার্ট জারি করতে হবে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টহল ব্যবস্থা ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের সবসময়ই সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। এ নির্বাচনে ফের যেন কোন সহিংসতা না হয়, এজন্য পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। অনুরূপভাবে রাজধানীতেও যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন ব্যত্যয় না ঘটে, সেজন্য পুলিশ সদস্যদের টহল ও নজরদারি বাড়াতে বলা হয়েছে। এটি পুলিশের একটি চলমান প্রক্রিয়া। কাউকে গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপি) এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে অনেক রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রাম আছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী রয়েছে। বিজয়ের মাসে নাশকতা, নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। দেশ-বিদেশে নানমুখী ষড়যন্ত্রের ছক কষা হয়। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ অফিসারদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই।