ধর্ষণে সহযোগিতার মামলার আসামি নুরের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারী আচরণ; আর্থিক বিষয়ে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনে পাল্টা কমিটি ঘোষণা। নুর ছাড়াও রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে ভাঙন ধরেছে।
নুর ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা হয়েছে।
তবে নুরদের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন বলছেন, পরিষদে কোনো ভাঙন ধরেনি।
সংগঠনের ভেতর আগে থেকেই নানা বিরোধ ছিল। ছয় নেতার বিরুদ্ধে এক তরুণীর ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টা মামলার পর তা চাঙ্গা হয়। আর এর জেরেই নতুন কমিটির ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ২২ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করে বলা হয়েছে, নুর স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন; সংগঠনের আর্থিক বিষয়ে অস্বচ্ছতা তৈরি করেছেন। নানা সময় প্রশ্ন করেও জবাব মেলেনি। তাই তারা এই পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
কমিটির নাম রাখা হয়েছে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের মামলাকে রাজনীতিকীকরণ করেছেন নুর ও তার সহযোগীরা। ভুক্তভোগীকে নোংরাভাবে আক্রমণ করা হয়েছে। এ নিয়েও সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদে বিভেদ তৈরি হয়েছে।
নতুন কমিটির আহ্বায়ক এ পি এম সুহেল। তিনি নুরদের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন।
সোহেল বলেন, ‘নুর একক স্বেচ্ছাচারিতায় এই সংগঠনে যা খুশি করে থাকেন৷ তারা আমাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে এসে অস্বচ্ছ পথে চলে গেছে। তারা আর্থিক লেনদেনের পরিপূর্ণ কোনো হিসাব দিতে পারে নাই। এসব নিয়ে কথা বলায় আমাকে বহিষ্কারও করেছে।’
নতুন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুর রহমান নুরদের কমিটিতে আহ্বায়ক খুলনা বিভাগের আহ্বায়ক ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক জালাল আহমেদ নুরদের কমিটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম নুরদের কমিটির সিলেট বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সমন্বয়ক ছিলেন।
নতুন কমিটির সদস্যসচিব ইসমাইল সম্রাট নুরদের কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আর ঢাকা কলেজ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ছিলেন।
যুগ্ম সচিব সামিউল ইসলাম নুরদের কমিটির ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন।
নুরদের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খাঁন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের পরিষদে কোনো ভাঙন ধরেনি। সুহেলকে গত মে মাসে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি কমিটি ঘোষণা করলে কিছু যায় আসে না। আমরা সবাই একাট্টা।’
এ বিষয়ে সুহেল বলেন, নুরদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই সিন্ডিকেট তাকে বহিষ্কার করেছে।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের সময় সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ পরিচিত হয়ে ওঠে। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন হলেও সামনে চলে আসেন নুর। ডাকসুর ভিপিও নির্বাচিত হন তিনি।
শুরুতে সংগঠনটির নাম ছিল ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’। পরে নাম করা হয় ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই পরিষদ গঠন করা হয়েছে, পরে আর তা থাকেনি। ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নুরের একক সিদ্ধান্তে তাড়াহুড়ো করে রাজনীতি করতে ‘বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ’, ‘শ্রমিক অধিকার পরিষদ’ ও ‘প্রবাসী অধিকার পরিষদ’ নামে তিনটি অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা হয়। এ নিয়ে সংগঠনে বিরোধও দেখা দেয়।এতদিন কেন এসব বিষয় নিয়ে বলেননি, তারও ব্যাখ্যা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। সুহেল বলেন, ‘সংগঠনের স্বার্থে ও তাদেরকে শোধরানোর সুযোগসহ নানা চিন্তা করে আমরা এতদিন ভেতরে ভেতের সোচ্চার হলেও প্রকাশ্যে চুপ করে ছিলাম।’
প্রকাশ্যে চুপ থাকার কারণ হিসেবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ের’ কথাও জানান সুহেল। বলেন, ‘নুরদের বিরুদ্ধে কথা বললেই সামাজিক মাধ্যম, ফোনে, ম্যাসেজে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়।
নুরদের অসাংগঠনিক মনোভাবের বিরুদ্ধে কথা বললে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বাম, গোয়েন্দাদের এজেন্টসহ অন্যান্য ট্যাগ দেয়া হয়। মানসিক রোগী বানিয়ে দেয়ার পাশাপাশি সাময়িক অব্যাহতির নামে হেনস্থা করাসহ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেয় এরা।
‘মানুষ এদের অন্ধভাবে বিশ্বাস করে, আর এরা মানুষের এই বিশ্বাসকেই নোংরাভাবে ব্যবহার করে।’
এই ধরনের ‘নৈতিক পদস্খলন ও বিষাক্তময় পরিস্থিতি’ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই সংগঠন ত্যাগ করেছে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সুহেল বলেন, ‘সংগঠনের অভ্যন্তরে ২১টি ইউনিট বিদ্রোহী হয়ে উঠে ও সংগঠনের অনেক নেতার ফেসবুক পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ে।’