ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের ন্যায় নৌ ও বিমান বাহিনী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আজ নারী নাবিক ও এয়ারম্যানরা দেশ-বিদেশে সুনাম ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ মিশনে নারী শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছে।’
পদোন্নতির ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সততা, বিশ্বস্ততা, আনুগত্যসহ নানা গুণাবলি অর্জনের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে রোববার ‘নৌ ও বিমান বাহিনীর নির্বাচনি পর্ষদ-২০২২’ উদ্বোধন করে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
নৌ ও বিমান সদর দপ্তরে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাহিনীর কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এই পর্ষদে পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা ভবিষ্যতে তাদের সুযোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশমাতৃকার সেবায় আরও ভালোভাবে সম্পৃক্ত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, পেশাগত দক্ষতা, নেতৃত্বের গুণাবলি, শৃঙ্খলার মান, সততা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের ওপর গুরুত্বারোপের নির্দেশ দেন। বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অত্যাধুনিক, প্রশিক্ষিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। নৌবাহিনীতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যুদ্ধজাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার, মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফট এবং বিশেষায়িত ফোর্স সোয়াডস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নতুন যুদ্ধজাহাজ কমিশনের পাশাপাশি নতুন নতুন ঘাঁটি নির্মাণের কাজ চলছে।’
নারীর ক্ষমতায়নে সামরিক বাহিনীর প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, ‘দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের ন্যায় নৌ ও বিমান বাহিনী নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আজ নারী নাবিক ও এয়ারম্যানরা দেশ-বিদেশে সুনাম ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ মিশনে নারী শান্তিরক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রেখেছে।
‘এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে, বিশেষত সম্প্রতি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলমান বন্যা মোকাবিলায় নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আর্তমানবতার সেবা করেছে।’
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দেশকে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু টানেল, মেট্রোরেল, এলএনজি টার্মিনাল, গভীর সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ী পাওয়ার প্ল্যান্ট, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ এবং ঢাকার সঙ্গে বিভাগীয় শহরগুলোরকে এক্সপ্রেসওয়েতে রূপান্তরের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নকে টেকসই করার লক্ষ্যে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়ন করছি। রূপকল্প-২০২১ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের ফলে আমরা উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটিয়েছি। বর্তমানে রূপকল্প-২০৪১-এর সঙ্গে এসডিজি-২০৩০ কে সমন্বয় করে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।’
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগের (আএসপিআর) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রেজা উল করিম শাম্মীর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, নৌ ও বিমান সদর দপ্তরে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নৌবাহিনীর ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেন থেকে কমোডর, কমান্ডার থেকে ক্যাপ্টেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার থেকে কমান্ডার পদবিতে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তা নির্বাচন করবে।
বিমান বাহিনীর ক্ষেত্রে এয়ার কমোডর, গ্রুপ ক্যাপ্টেন এবং উইং কমান্ডার পদে যোগ্য প্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত এ পর্ষদের মাধ্যমে বিমান বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য মেধাবী, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তারা সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে পদোন্নতি পাবেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল নির্বাচনি পর্ষদে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি তার স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব বীর যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
নৌপ্রধান বর্তমান সরকারের সময়ে নৌবাহিনীর আধুনিকায়নে নেয়া পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সশস্ত্র বাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও দিকনির্দেশনা নৌ সদস্যদের কর্মস্পৃহা ও মনোবল বৃদ্ধি করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি। বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মূল্যবান দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ দক্ষ, সৎ ও উন্নত গুণাবলির নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’
এরপর বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যের শুরুতে তিনিও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রণীত ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আওতায় সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন ঘাঁটি, ইউনিট এবং সম্প্রসারিত হচ্ছে অবকাঠামোগত সুবিধা। বৃদ্ধি পাচ্ছে জনবল কাঠামো।’
বিমান বাহিনীর নির্বাচনি পর্ষদের কার্যক্রম প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে আশ্বস্ত করেন এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান। বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের মেধা, মাঠ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অবদান এবং বাস্তবসম্মত পেশাদারত্বের পাশাপাশি দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে।’
নির্বাচনি পর্ষদে বিমান সদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিভিন্ন ঘাঁটির এয়ার অধিনায়ক এবং অন্যান্য এয়ার অফিসাররা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনি পর্ষদ-২০২২ আগামী বুধবার শেষ হবে।