৮০ বছরের পুরোনো চরটির চারদিক দিয়ে পদ্মা নদী। নৌপথই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটার সেই দুর্গম চরে কাল মঙ্গলবার বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে ওই চরে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ।
শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে সড়কপথে ভেদরগঞ্জের দুলারচরের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। এরপর ১৫ কিলোমিটার পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কাচিকাটা। ওই চরের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ পাবে— এমন আনন্দে দিন কাটাচ্ছে। অনেকে বসতঘর সাজিয়েছে। ঘরে টিভি ও রেফ্রিজারেটর এনে রেখেছেন।
কাল কাচিকাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৬৮ পরিবারকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে। শরীয়তপুর–২ আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক বিদ্যুৎ–সংযোগের উদ্বোধন করবেন।
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শরীয়তপুর জেলার ওপর দিয়ে পদ্মা নদী প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদী ভেদরগঞ্জের কাচিকাটা, নড়িয়ার চরআত্রা, নওপারা ও জাজিরার কুণ্ডেরচর ইউনিয়নকে বিচ্ছিন্ন করেছে। ওই ৪টি ইউনিয়নের ৭৯টি গ্রামে অন্তত এক লাখ মানুষের বসবাস। চরগুলোতে নৌপথে যাতায়াত করতে হয়।
ওই চরগুলোতে বিদ্যুৎ–সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক। কিন্তু শরীয়তপুর থেকে পদ্মা নদী পেরিয়ে চরে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। তখন মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্লের সাহায্যে বিদ্যুৎ আনার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চরে বিদ্যুতায়নের কাজ শুরু হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নড়িয়ার চরআত্রা ও নওপারা ইউনিয়নে প্রথম সংযোগ দেওয়া শুরু হয়।
মুন্সিগঞ্জের দিঘীর পার থেকে নড়িয়ার নওপারার পদ্মা নদীর দূরত্ব এক কিলোমিটার। ওই এক কিলোমিটার নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্লের সাহায্যে বিদ্যুৎ আনা হয় নওপারা ১০ এমিভিএ সাবস্টেশনে। সেখান থেকে ৪২৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চরআত্রা, নওপারা, কুণ্ডেরচর ও চাঁদপুরের একলাশপুর ইউনিয়নে ৪ হাজার ৫৬০ পরিবারকে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আর কাল কাচিকাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৬৮ পরিবারকে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ওই চরগুলোতে আরও ১৮ হাজার ৫০০ পরিবারকে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হবে।
কাচিকাটা ইউনিয়নের চরজিংকিং এলাকার বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন বলেন, চরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে তা কল্পনাও করতে পারেননি। এখন চরের মানুষের জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হবে। বোরকাঠি এালাকার বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘নৌপথ ছাড়া চর থেকে আমরা বের হতে পারি না। কোনো নাগরিক সুবিধা পাই না। সেই চরে আজ বিদ্যুতের আলো জ্বলবে। আমরা অনেক আনন্দিত।’
কাচিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমীন বলেন, চারদিক দিয়ে নদী, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে চরের মানুষ বেঁচে আছে। অনেক দুঃখ–কষ্ট চরের বাসিন্দাদের সঙ্গী। সেই চরে বিদ্যুতের আলো আসার খবরে আনন্দের বন্যা বইছে।
সখিপুর থানা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ফজলুল হক কাওসার মোল্যা বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের সময় চরবাসীর দাবী ছিল বিদ্যুৎ–সংযোগ পাওয়ার। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক সাংসদ হওয়ার পর চরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছেন।
মুন্সিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এ এইচ এম মোবারক উল্লাহ বলেন, পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া অনেক চ্যালেঞ্জের ছিল। চরে সঞ্চালন লাইন বসানো অনেক কঠিন। নদীভাঙন, নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি ভাবতে পারেননি এতো স্বল্প সময়ে চরের অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে পারবেন।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল গ্রামের মানুষকে শহরের সেবা পৌঁছে দেওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন। কেউ কখনো বিচ্ছিন্ন চরের মানুষের উন্নয়ের দিকে ফিরে তাকায়নি। চরের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। খুব সল্প সময়ের মধ্যে চরবাসী সব নাগরিক সেবা পাবেন।