চলতি সেপ্টেম্বর মাসে পদ্মা সেতুর দু’টি স্প্যান বসানোর প্রক্রিয়া চলমান। আর সেতুর সব স্প্যান বসানো হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। সে লক্ষেই এখন চলছে কর্মযজ্ঞ। চলতি সেপ্টেম্বর মাসেই দুইটি স্প্যান বসানোর লক্ষ্য থাকায় ৭ সদস্যের চীনের বিশেষ দলটি সোমবার বাংলাদেশে পৌঁছাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতুর দুই স্প্যান বসছে চলতি মাসেই। আর সেতুর সব স্প্যান বসে যাচ্ছে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে। সে লক্ষেই যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে। স্প্যান আবারো বসানো শুরু হচ্ছে বলেই সাত সদস্যের চীনা বিশেষ দল সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
এরপরই স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি শুরু হবে। স্প্যান বসানোর জন্য বিশেষ অ’ভিজ্ঞতা সম্পন্ন চীনা প্রকৌশলী টিম ব’ন্যা থাকায় ছুটি কা’টাতে নিজ দেশে ফিরে যান।
এ টিমের সাথে চীনা রাষ্ট্রীয় বীমা কোম্পানির তিন সদস্যের একটি টিমেরও আসার কথা রয়েছে। তারা গত ৩১ জুলাই থেকে পদ্মা’র ভাঙনে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করবেন।
রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) পদ্মা সেতুর কাজে দায়িত্বশীল নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করে সময় সংবাদকে জানিয়েছেন, কুমা’রভোগ ইয়ার্ডে সেতুর বাকি ১০টি স্প্যানের মধ্যে চারটিই পুরোপুরি প্রস্তুত। আরও চারটি স্প্যানের ফিটিং সম্পন্ন হয়েছে। এখন রং করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। আর বাকি দু’টি স্প্যানের এখন ওয়েল্ডিং চলছে। ‘২ই’ এবং ‘২এফ’ নম্বর এই স্প্যান দুটিও ফিটিং সম্পন্ন করে পিয়ারে (খুঁটি) বসানোর জন্য প্রস্তুত করা হবে।
আব্দুল কাদের আরো বলেন, সবশেষ স্প্যান ‘২এফ’ এর ওয়েল্ডিং শুরু হওয়ায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বেশ সন্তুষ্ট। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্প্যান সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়াই আমাদের কাছে যুগান্তকারী অগ্রগতি। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটিতে ৪১টি স্প্যানের ৩১টি স্প্যান বসে গেছে। চীনে তৈরি হওয়া সেতুর সব স্প্যানই এখন প্রকল্প এলাকায় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে।
সেতুর এক নম্বর মডিউলে ‘১এ’, ‘১বি’, ‘১সি’, ‘১ ডি’ স্প্যান এখন পুরোপুরি প্রস্তুত। এই চারটি স্প্যানের মধ্যে ‘১ ডি’ বসছে ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে। ‘১বি’ বসছে ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটিতে, ‘১বি’ বসছে ২ ও ৩ নম্বর খুঁটিতে এবং ‘১এ’ বসছে ১ ও ২ নম্বর খুঁটিতে। মধ্য সেপ্টেম্বর ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটিতে ৩২ তম স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ১০ দিন পরই বসবে ৩৩ তম স্প্যান ৩ ও ৪ নম্বর খুঁটিতে। এখন একই সাথে দু’টি ‘লিফটিং ফ্রেম’ ব্যবহার করা হবে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে স্প্যানগুলো বসবে। সেভাবেই চলছে প্রস্তুতি। আর বাকি ছয়টি স্প্যানই বসছে ২ নম্বর মডিউলে। ৭ নম্বর খুঁটি থেকে ১৩ নম্বর খুঁটিতে বসবে এই স্প্যানগুলো। জানান তিনি।
মো. আব্দুল কাদের জানান, স্প্যানগুলো বসানোর জন্য পদ্মায় পানির লেভেল প্রয়োজন ৪.৪৮ মিটার। তবে এখন পদ্মায় পানি রয়েছে ৫.৪১ মিটার উচ্চতায়। আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই পরিমাণ পানি কমে আসবে। এদিকে স্প্যান বহনকারী ৩৬শ’মে. টন ওজন বহনে সক্ষম ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান হু’ নড়িয়ার মূল নদীতে নোঙ্গর করে রাখা হয়েছে। স্প্যান বসানোর আগেই এটি সরাসরি মা’ওয়ার ইয়ার্ডে নিয়ে আসা হবে।
এদিকে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে নদী ভাঙনে ক্ষতিপূরণ নিরুপনে ইন্সুরেন্স কোম্পানি চীনা জেনারেল ইন্সুরেন্সের তিন প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসছেন। তারা সরেজমিন পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের সাধারণ বীমা’র সাথে সমন্বয় করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করবে।
এর আগে সবশেষ গত ৩১ মে পদ্মা সেতুর ৩০তম স্প্যান পিলারের উপর বসানো হয়। স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ২৬ ও ২৭ নম্বর খুঁটির ওপর স্থাপন করা হয়। এতে দৃশ্যমান হয় সেতুর ৪৫০০ মিটার বা সাড়ে ৪ কিলোমিটার। আর ৩১ তম স্প্যানটি বসে গেলে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হবে ৪ হাজার ৬৫০ মিটার।
সাম্প্রতিক সময়ে অন্য স্প্যানগুলো বসাতে দুই দিন করে সময় নেয়া হলেও দিনে দিনেই বসিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয় ৩১তম স্প্যানটি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইয়ার্ড থেকে নিয়ে এসে পিলারের উপর তুলতে সব মিলে সময় লাগে ৭ ঘণ্টার বেশি। পদ্মা সেতু মা’ওয়ার সাথে জাজিরাকে যু’ক্ত করেছে। এখন দৃশ্যমান ৪.৬৫ কিলোমিটার।
সবশেষ গত ১০ জুন ৩১তম স্প্যান বসানো হয়। জাজিরা প্রান্তের ২৫ ও ২৬ নম্বর খুঁটির ওপর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু ৪ হাজার ৬৫০ মিটারে দৃশ্যমান হয়। এ স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে মা’ওয়ার সাথে সংযু’ক্ত করেছে জাজিরাকে। এখন বাকি আছে মা’ওয়া প্রান্তের মাত্র ১০টি স্প্যান। এই ১০ স্প্যানে দেড় কিলোমিটার দৃশ্যমানে পদ্মা সেতুর পূর্ণ্যতা পাবে। এখন তাও সময়ের ব্যাপার মাত্র।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সেতুটি দ্বিতল হবে, যার ওপর দিয়ে সড়কপথ ও নিচের অংশে থাকবে রেলপথ। সেতুর এক খুঁটি থেকে আরেক খুঁটির দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিটার। একেকটি খুঁটি ৫০ হাজার টন লোড নিতে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূলসেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে চীনের ‘সিনো হাইড্রো করপোরেশন’।