মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর দিচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনায় ৯৬০, গোপালগঞ্জে ৭৮৭, বগুড়ার ধুনটে ১০১, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৫৭ ও পাবনার সুজানগরে ২০টি জমিসহ ঘর গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তরের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। আমাদের আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে ডেস্ক রিপোর্ট :
নেত্রকোনা : নেত্রকোনা জেলার মোট ৯৬০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র পরিবারের জন্য জমিসহ ঘর বরাদ্দ করেছে সরকার। প্রত্যেক পরিবারের নামে বরাদ্ধ দেওয়া হচ্ছে দুই শতক করে খাসজমি। আর তাতে ঘর নির্মাণ বাবদ ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ৭১ হাজার করে টাকা, যার পুরোটাই বহন করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে।
সদর উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এরশাদুল আহমেদ বলেন, সদরের বড়গাড়া এলাকায় ২২, রাজেন্দ্রপুরে ১৪, লক্ষ্ণীগঞ্জে চার ও ব্যক্তি-উদ্যোগে দান করা জায়গায় তিনজনকে ঘর ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে।
সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা এনামূল হক পলাশ বলেন, বাছাই করা পরিবারগুলো শুধু ভূমিহীন বা গৃহহীন নয়, প্রত্যেকেই হতদরিদ্র শ্রেণির মানুষ।
খালিয়াজুরীর ইউএনও এ এইচ এম আরিফুল ইসলাম বলেন, হাওড়াঞ্চলের এ উপজেলায় ৪৪৩টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। হাওড়ের ঢেউয়ের ভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রভৃতি বিবেচনা করে সুবিধাজনক স্থানে তাদের জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঘর নির্মাণকাজ যাতে টেকসই ও সুন্দর হয়-সেজন্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২০ জানুয়ারি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘর ও জমি বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এ জন্য ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রত্যেকটি ঘরের নির্মাণকাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে।
গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের ভূমিহীনদের জন্য ৭৮৭টি গৃহের নির্মাণকাজ দ্রম্নত গতিতে এগিয়ে চলছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার ইউএনওরা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের নিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারির আগেই এ নির্মাণকাজ শেষ করতে বদ্ধপরিকর।
গোপালগঞ্জে নির্মাণাধীন ৭৮৭ গৃহের মধ্যে সদরে ৪৮০, কাশিয়ানীতে ২০০, মুকসুদপুরে ৫০, কোটালীপাড়ায় ৩০ ও টুঙ্গিপাড়ায় ২৭টি গৃহের নির্মাণকাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। মধুমতি নদীতীরে এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি ভূমিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের এ গৃহনির্মাণের কাজ চলছে। গোপালগঞ্জ সদরের ইউএনও মো. রাশেদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প আশ্রয়ণ-২ এর কাজ যথাসময়ে শেষ করতে সার্বক্ষণিক মাঠে থেকে সঠিক তদারকির মাধ্যমে গৃহগুলো যথাযথ মান বজায় রেখে স্থায়ী ও টেকসই মানের উন্নত মালামাল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী গোপালগঞ্জের ভূমিহীনদের জন্য ৭৮৭টি ঘরের নির্মাণকাজ দ্রম্নতগতিতে এগিয়ে চলছে। তিনি নিজে নির্মাণস্থলে গিয়ে কাজ তদারকি করছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমিহীনদের হাতে ৫০ হাজার ঘরের কবুলিয়াত তুলে দেবেন।
ধুনট (বগুড়া) : রোববার বিকালে উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের হাঁসখালি, ঘুগড়াপাড়া ও নিমগাছী ইউনিয়নের বড়ইতলীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে ভূমিহীদের জন্য নির্মিত ১০১টি বাড়ি পরিদর্শন করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ধুনটের ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত, থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মহাসিন আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আলিম, ইউপি চেয়ারম্যান হারেজ উদ্দিন আকন্দ, আজাহার আলী পাইকার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জুলফিকার আলী মাস্টার, ইউপি সচিব মাসুদ রানা, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তোতা প্রমুখ।
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) : কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ জর্জ। সোমবার সকালে উপজেলার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৯৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ব্যয়ে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ৫৭টি বাসগৃহ নির্মাণের মধ্যে সোমবার চাপড়া ইউনিয়নে গৃহনির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়।
ইউএনও রাজিবুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম এ মুহাইমিন আল জিহান, চাপড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনির হাসান রিন্টু, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান, শিলাহদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন খান তারেক, চাপড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এনামুল হক মনজু প্রমুখ।
সুজানগর (পাবনা) :পাবনার সুজানগর উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাজমুল হুদা জানান, উপজেলার মোজাহিদপুরে ১৮ ও ভায়নায় দুটি ঘর তৈরি হওয়ায় ২০টি গৃহহীন পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত দুই কক্ষের সেমিপাকা প্রতিটি ঘরের জন্য ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
ইউএনও মো. রওশন আলী জানান, সরকারের এ প্রকল্প সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ার পথে। প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনরাই এ ঘরগুলো পাবেন। এর ফলে পরিবারগুলো পাবে সামাজিক মর্যাদা ও নতুন ঠিকানা।