ডেস্ক নিউজ
পাটে সয়লাব বাজার। ক্রেতা-বিক্রেতার আনাগোনায় জমজমাট বেচাকেনা। পাটের দাম বাড়তে শুরু করেছে। রমরমা হয়ে উঠেছে পাট বাণিজ্য। মৌসুমের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকায় মণপ্রতি পাটের দাম উঠেছে সাড়ে তিন হাজার টাকা। পাটচাষিরা আশা করছেন, এবার পাটের মণ ১০ হাজার টাকায় উঠতে পারে। গত বছর পাটের মৌসুম শেষে পাটের দাম সাত হাজার টাকায় উঠেছিল। পরপর দুই বছর পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। দীর্ঘদিন পর আবার সোনালি আঁশে নতুন আশা দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর টানা দুই বছর ধরে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ দামে বিক্রি হচ্ছে পাট। এবার বাম্পার ফলন আর মৌসুমের শুরুতে ভালো দামে কৃষকের মুখে হাসি। পাট খাত ঘিরে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন দেশের প্রায় ১ কোটি চাষি। চলতি মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মানভেদে প্রতি মণ পাট তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় ওঠানামা করছে। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) পাট কিনলে এবার পাটের দাম সাত হাজার টাকা পর্যন্ত উঠত বলে বলছেন পাটচাষিরা। রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলে উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিজেএমসি এবার পাট কিনেনি। এ হিসেবে পাটের দাম পড়তি থাকার কথা থাকলেও ঘটেছে উল্টো ঘটনা। দাম না কমে বরং বেড়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি পাটকল আর কাঁচা পাট রপ্তানিকারকরা এবার একচেটিয়া ব্যবসা করছেন। সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি দেশে পরিবেশবান্ধব পাটের চাহিদা বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও পাট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। দামও রেকর্ড ছুঁয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই পাট রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ১০৩ কোটি ৫৭ লাখ (১.০৩ বিলিয়ন) ডলার আয় হয়েছে। চলতি বছর দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন গাইবান্ধার গবিন্দপুর এলাকার কৃষক আলকাছ মিয়া। তিনি জানান, গত বছরের মৌসুমের শুরুতে তিনি দেড় হাজার টাকা মণে সব পাট বিক্রি করে দেন। তার পাশের বাড়ির কৃষক ছুবান আলী মোড়ল মৌসুমে শেষে সাত হাজার টাকা মণে পাট বিক্রি করেছেন। গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতায় এবার তিনি শনিবার হাটে তিন হাজার ২০০ টাকা মণে কিছু পাট বিক্রি করেছেন। আর কিছু পাট মজুত রেখেছেন দাম বাড়লে বিক্রি করার জন্য। এ বছর অনেকটা খুশি মনেই পাটের আবাদ করেন নেত্রকোনার পূর্বধলার কৃষক ছামাদ আলী সরকার। গতবার ভালো দাম পাওয়ায় এবার দাম বাড়তে পারে, এমন আশায় তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেন তিনি। ঝুঁকি নিয়ে সফল হয়েছেন তিনি। দুই বছর আগে ২০১৯ সালে প্রতি মণ পাট এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি করে তিন বিঘা জমিতে প্রায় ১২ হাজার টাকা লোকসান গুনেছিলেন তিনি। গত বছর মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ২০২০ সালে প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছেন পাঁচ হাজার ৪৫০ টাকায়। গত বছর পাট বিক্রি করে তার কয়েক বছরের খরচ উঠে গেছে। মাত্র তিন মাসে পাট রোপণ করে ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি। গাইবান্ধার আলকাছ মিয়া, কিংবা নেত্রকোনার ছামাদ আলীর মতো দেশের কৃষক এবার মৌসুমের শুরুতেই পাটের ভালো দাম পাচ্ছেন। জামালপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে পাট বিক্রি করতে আসা পাট বিক্রেতা আবুল কাশেম জানান, তার এলাকার হাট-বাজারে সাদা পাট তিন হাজার এবং কেনাফ দুই হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সোহাগী এলাকার পাটচাষি আব্দুল আলিম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে দুই বছর ধরে আমরা পাটের দাম ভালো পাচ্ছি। এ বছর প্রতি মণ পাটের দাম সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। পাটের ভালো দাম অব্যাহত থাকলে থাকলে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারব এবং পাট চাষে আরও আগ্রহী হবো।’ ফরিদপুরের কানাইপুর হাটে পাট বিক্রি করেন কৃষক আব্দুল করিম। তিনি জানান, হঠাৎ করে পাটের দাম ওঠানামা করছে। শুক্রবার তিনি তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এর আগে সপ্তাহে পাটের দাম আরও বেশি ছিল। পাট গবেষক ডক্টর মঞ্জুর করিম যায়যায়দিনকে বলেন, এবার পাটের সরবরাহ এবং গুণগত মান বেশ ভালো। কৃষকরা আবার আবাদে মনোযোগী হয়েছেন। এটা ধরে রাখতে হবে। ২০০৯ সাল থেকে দেশের পাট খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। তিনি বিজেএমসি’র পাট ক্রয় কেন্দ্রগুলো চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, সীমিত আকারে অন্তত রাষ্ট্রায়ত্ত ১০টি পাটকল হলেও চালু রাখতে হবে। বিজেএমসি উৎপাদনে না থাকলে দেশে-বিদেশে ক্রেতা হারাবে। বেসরকারি পাটকলগুলো এই ব্যবসা নিয়ে নিবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানা যায়, এবার সারাদেশে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে সাত লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ বেল পাট উৎপাদন। গত বছর সারাদেশে পাটের আবাদ হয় ৬ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে। বিশ্বের মোট পাটের ৯০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। এককভাবে বাংলাদেশ বিশ্বে উৎপাদিত কাঁচা পাটের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাঁচা পাটের পাশাপাশি জুট ইয়ার্ন, টুওয়াইন, চট ও বস্তা রপ্তানি করে। এর পাশাপাশি রপ্তানি হয় হাতে তৈরি বিভিন্ন পাটজাত পণ্য ও কার্পেট।