নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়া পৌর শহরের শোলাকুড়া মহল্লার দিনমজুর আব্দুর রহিম মৃধার প্রতিবন্ধী ছেলে রাসেল মৃধা। জন্ম থেকেই নেই তার দুই হাত ও একটি (ডান) পা। তবে রয়েছে তার বাঁম পা। সেই পা স্বাভাবিক আকারের চেয়ে অনেকটা ছোট। শরীরের অঙ্গ কম থাকলেও শিশুকাল থেকেই পড়াশুনার প্রতি রয়েছে অনেক বেশী স্পৃহা। এভাবেই সকলের সহযোগিতা নিয়ে পার করেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি। তার পর শুরু হয় মাদ্রাসায় তার পড়াশুনা। পড়াশুনায় আগ্রহ দেখে দিনমজুর বাবা শত কষ্টের মাঝেও তার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে দাখিল পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৩.৮৮ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। শারীরিক সক্ষমতার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ তার। তাই তো পায়ের আঙুলের ফাঁকে কলম রেখে এবার শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে প্রতিবন্ধী রাসেল মৃধা। আজ রবিবার সরেজমিনে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় এলাকায় আল মাদরাসাতুল জামহুরিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষায় পা দিয়ে কলম ধরে পরিক্ষা দিতে দেখা যায়। তার এভাবে পরিক্ষা দেওয়া দেখে পাশের শিক্ষার্থীদের মাঝেও বেড়েছে পড়াশুনায় আগ্রহ। রাসেল মৃধার লেখাপড়ার প্রতি আলাদা স্পৃহা দেখে তার দরিদ্র মা-বাবা মনে করছেন ছেলের উচ্চ শিক্ষার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে।
রাসেলের সহপাঠীরা বলেন, রাসেল অনেক ভালো ছাত্র। তার পড়াশুনার যে আগ্রহ তা তাদের অনেকের মধ্য নেই। অনেক সময় রাসেলের কাছ থেকেই তারা অনেক কিছু জেনে নেয়। রাসেলের জন্য তারাও ভালো কিছু আশা করে।
রাসেল মৃধার দিনমজুর বাবা আব্দুর রহিম মৃধা বলেন, লেখাপড়ার প্রতি ছেলের আগ্রহ দেখে দিনমজুরি করে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি। শত অভাবের মাঝেও কষ্ট করে ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা ছিল তাদের। তিনি মনে করতেন লেখাপড়া শিখে ছেলে একদিন আমাদের মুখ উজ্জ্বল করবে। সরকারের কাছে অনুরোধ রাসেলের জন্য একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।
এ বিষয়ে শোলাকুড়া ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোতাররফ হোসেন বলেন, ‘রাসেল মৃধা এ বছর তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বিগত পরীক্ষাগুলোতেও সে কৃতিত্বের সঙ্গে পাশ করেছে। আমরা আশাবাদী রাসেল এবারও ভালো ফল অর্জন করবে।’ তার সেই মনোবল রয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপির কাছে রাসেলের চাকুরির জন্য তিনিও আবেদন জানান।