নতুন বছরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। পুরনো বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই নতুন করে বিনিয়োগে ফিরছেন। যোগ দিচ্ছেন নতুনরাও। বিনিয়োগকারীদের আশায় ভর দিয়ে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহ বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতির মধ্য দিয়ে যাত্রা করেছে শেয়ারবাজার। প্রথম সপ্তাহে ঢাকার শেয়ারবাজারে বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা। এতে বাজার মূলধন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ৪ লাখ ৭০ হাজার ২৭০ কোটি টাকায় উঠেছে।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এমন উত্থানে স্বভাবতই শেয়ারবাজারসংশ্নিষ্ট সবাই খুশি। তবে সতর্কভাবে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ও শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেশ কিছু উদ্যোগ ভালো। তবে ব্রোকারেজ শাখা খোলা এবং ডিজিটাল বুথ স্থাপনের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে শেয়ারবাজারকে নিয়ে গেলে বিনিয়োগে অনভিজ্ঞ অনেকে ঢুকে পড়বেন। এতে বড় ধরনের চাহিদা তৈরির কারণে শেয়ারদর অযৌক্তিক পর্যায়ে গিয়ে পতনের শঙ্কা থাকবে। এ কারণে টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত। ভালো শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানো উচিত।
শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার শক্ত ভিতে দাঁড় করাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনকে প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করে। বিগত বছরগুলোয় যেসব ইস্যু বিনিয়োগকারীদের আস্থায় চিড় ধরায়, সেগুলোর সমাধানে উদ্যোগ নেয় বর্তমান বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিশেষত অতীতে তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের যারা শেয়ার বিক্রি করে পালিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিচালক পদে থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এককভাবে কমপক্ষে ২ শতাংশ এবং উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে আইনি বিধান ২০১১ সালে প্রচলন করে বিগত কমিশন। কিন্তু দায়িত্ব পালনের নয় বছরেও তা কার্যকর করতে পারেনি। নতুন কমিশন মাত্র ছয় মাসে তা কার্যকর করে দেখিয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহজুড়ে দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ৪ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। বাজার মূলধন বেড়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা বা প্রায় ৫ শতাংশ। দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ২১৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৮৩ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ। তার আগের চার সপ্তাহেও সূচক বেড়েছিল। এতে টানা ছয় সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৭৫০ পয়েন্ট বেড়েছে।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকের। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি বেড়েছে ৮৪ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৮৭ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগের চার সপ্তাহেও সূচকটি বেড়েছিল। এতে ছয় সপ্তাহের টানা উত্থানে সূচক বেড়েছে ৩৫৮ পয়েন্ট।
ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচকও টানা ছয় সপ্তাহ বেড়েছে। গত সপ্তাহে সূচক বেড়েছে ২৩ দশমিক ৮২ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৯২ শতাংশ। এতে পাঁচ সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছে ১৪৭ পয়েন্ট।
সব কয়টি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২১৫টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ১১৪টির। আর ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ১ হাজার ১৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৮২৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৯৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ৫ হাজার ৮০৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন বেড়েছে ৪ হাজার ১৪৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা বা ৭১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনে ‘এ’ গ্রুপ বা ভালো কোম্পানির অবদান ছিল ৭৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া ‘বি’ গ্রুপের ১৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, ‘জেড’ গ্রুপের দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ‘এন’ গ্রুপের ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ অবদান ছিল।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর মূল বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বেক্সিমকো, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, আইএফআইসি ব্যাংক, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, রবি, লাফার্জহোলসিম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, পাওয়ার গ্রিড, ন্যাশনাল ব্যাংক ও অ্যাকটিভ ফাইন।