নিজস্ব প্রতিবেদ:
পুলিশী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বাস চালককে পিটিয়ে কর্মস্থলের ইতি টেনে গেলেন নাটোরের গুরুদাসপুর থানার সদ্য বিদায়ী সহকারী উপ পরিদর্শক আশিকুর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গুরুদাসপুর উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের কাছিকাটা টোল প্লাজার একটি কক্ষে এমন ঘটনা ঘটায় তিনি। আহত অবস্থায় বাস চালক নাজিম উদ্দিন মিঠুকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চালক নাজিম উদ্দিন মিঠু নাটোর শহরের বড় হরিশপুর এলাকার মুক্তিযোদ্ধা মৃত নাজমুল হোসেনের ছেলে ও গ্রামীণ ট্রাভেলসের চালক। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আশিকুর রহমানের বিচার দাবীতে ৭২ ঘন্টা আল্টিমেটাম দিয়েছে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান , চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী গ্রামীণ ট্রাভেলসের যাত্রীবাহী একটি কোচ নিয়ে নাটোরের বড়াইগ্রামের বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক অতিক্রম করছিলেন চালক নাজিমউদ্দীন মিঠু। এ সময় চালকসহ কোচের যাত্রীরা দেখতে পান মহাসড়কের পাশের ফিডার রোড বাদ দিয়ে প্রধান মহাসড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালিয়ে নাটোরেরর দিকে যাচ্ছিলেন গুরুদাসপুর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক আশিকুর রহমান । মোটর সাইকেলটি অতিরিক্ত গতিতে বেপরোয়া ভাবে চালানোর কারণে ওই পুলিশ সদস্য আশিকুর সড়কে পিছলে পড়ে যায়। পরে পুলিশ সদস্য আশিকুর কোচের চালকের ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে কোচের পিছনে ধাওয়া করে কাছিকাটা টোল প্লাজায় এসে গ্রামীণ ট্রাভেলসের কোচটি থামিয়ে দেয় এবং কোচের চালক নাজিম উদ্দীন মিঠুকে জোরপূর্বক কোচ থেকে নামিয়ে টোল প্লাজার একটি কক্ষে আটকে রাখে। এ সময় প্রায় ঘন্টা ব্যাপী সময় ধরে পুলিশ সদস্য আশিকুর তার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কোচ চালক নাজিম উদ্দিন মিঠুকে বেধড়ক কিল, ঘুষি এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এই সময়টুকু কোচের যাত্রীরা টোল প্লাজায় আটকে থাকে। পরে বাসে থাকা যাত্রীরা চালককে অন্যায়ভাবে মারপিট করার প্রতিবাদ করলে মিঠুকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় ফেলে রেখে আশিকুর চলে যায়। আশিকুর চলে যাওয়ার পর স্থানীয় ঘটনাটি পরিবহন নেতাদের জানান। খবর পেয়ে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা আহত অবস্থায় চালককে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর কোচ কতৃপক্ষ কোচে অন্য চালক দিলে কোচটি ঢাকার পথে রওনা হয়।
এ বিষয়ে গ্রামীণ ট্রাভেলসের নাটোর কাউন্টারের ইনচার্জ নাজমুল হাসান বলেন, বিষয়টি তাদের কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়াও চালকদের ইউনিয়ন রয়েছে এটা তারা সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন। তারপরও তিনি ওই পুলিশ সদস্যের বিচার দাবী করেন।
এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম বলেন , সহকারী উপ পরিদর্শক আশিকুর রহমান গুরুদাসপুর থানাতে কর্মরত ছিল। তবে তাকে আজকেই রাজশাহীতে বদলী করা হয়েছে। আজ গুরুদাসপুরে ছিল তাঁর শেষ কর্মদিবস। থানা থেকে বিদায় নেওয়ার পর তার কর্মকান্ড নিয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। এবিষয়ে উর্দ্ধোতন কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নিবেন। তবে কোন পুলিশ সদস্যই সাধারন জনগনকে মারপিট করার অধিকার রাখেনা।
এদিকে কোচ চালক নিজাম উদ্দিন মিঠুকে পিটানোর কথা স্বীকার করে সহকারী উপ পরিদর্শক আশিকুর রহমান বলেন, গ্রামীণ ট্রাভেলসের চালক অত্যান্ত বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য তিনি মোটর সাইকেল নিয়ে রাস্তার পার্শ্বে পরে যান। ভবিষ্যতে সে যেন ভালোভাবে গাড়ি চালায় এই কারনেই তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়েছি । আপনারা দেখবেন তিনি এরপর থেকে আর বাঁজে ভাবে গাড়ী চালাবেন না।
এ ব্যাপারে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকরামুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ থাকলে চালকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কাউকে মারপিট করার অধিকার কারো নেই। এ ঘটনায় তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়।
নাটোর জেলা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, তাদের সদস্য নাজিম উদ্দীন মিঠুকে অন্যায়ভাবে মারপিট করা হয়েছে। বর্তমানে চালক মিঠকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চালককে অন্যায় ভাবে পিটানো ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নেয়া হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে ওই পুলিশ সদস্যর শাস্তির দাবী করেন।