২০১৪ সালে পুলিশের হেফাজতে জনি নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ জন আসামীর মধ্যে তিন জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। অপর দু্ই জনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দুপুরে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস এ রায় ঘোষণা করেন।
২০১৩ সালে নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন প্রণয়নের পর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় কোন মামলার রায় হল।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন পল্লবী থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদ, এসআই রশিদুল ইসলাম এবং এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু। যাবজ্জীবন ছাড়াও এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং দুই লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। জরিমানা ও ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে আরো ৬ মাস করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি আব্দুল্লাহ আবু বলেছেন, ক্ষতিপূরণের টাকা ১৪ দিনের মধ্যে বাদী বরাবর জমা দিতে হবে।তিনি বলেন, “যে আইনের অধীনে বিচার হলো তার সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন। যেখানে যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। আমরা সন্তুষ্ট রায়ে।”এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের কথা জানিয়েছেন আসামীপক্ষের আইনজীবি ফারুক আহাম্মদ।তিনি বলেন, ২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইন অনুযায়ী জরিমানা করা অর্থ বিচারিক আদালতে জমা দেয়ার আগে আপিল করার সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই অর্থ পরিশোধ না করে আপিল করা যায় কিনা সে বিষয়ে তারা একটি রিট করবেন বলে জানান।মি. আহাম্মাদ মনে করেন, আইনটির এই ধারা বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী।মামলা দায়েরের ছয় বছর পর নিম্ন আদালতে বিচার শেষ হয়ে রায় এলো।
২০১৪ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর মিরপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে দুই ভাই ইশতিয়াক হোসেন জনি এবং ইমতিয়াজ হোসেন রকিকে আটক করে পুলিশ।
বড় ভাই জনির মৃত্যু হয় পুলিশ হেফাজতে।
ইমতিয়াজ হোসেন রকি গত বছর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিন, ওই রাতে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনেই মৃত্যু হয়েছিল তার ভাইয়ের।
এ ঘটনায় মামলা করেন তিনি। ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। ২০১৬ সালে বিচার শুরু হয়।
আজ রায় ঘোষণার আগে থেকেই দায়রা জজ আদালতের প্রাঙ্গনে মানববন্ধন করছিলো নিহত জনির ভাই ইমতিয়াজ হোসেন রকি, তার মা খুরশিদা বেগম, দুই সন্তান এবং এলাকাবাসী।
রায় ঘোষণার পর রকি জানান, রায়ে সন্তুষ্ট তারা। তবে উচ্চ আদালতেও যাতে এই রায় বহাল থাকে সেই দাবি জানিয়েছেন তারা।
“আমি যা চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি। এখন আমার অনুরোধ এই রায় যাতে উচ্চ আদালতেও অপরিবর্তিত থাকে।”
জনির মা খুরশিদা বেগম বিবিসি-কে বলেন, “রায় দিয়েছে, ভাল হয়েছে। আমরা খুশি হইলাম।”
মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুর রহমান জাহিদসহ কয়েক জন পুলিশ সদস্য জনিকে থানা হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করে।