নিউজ ডেস্ক : পোল্ট্রিখাতের উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। ‘পোল্ট্রি গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদারকরণ’ নামের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের মাধ্যমে আমিষের ঘাটতি পূরণে বেশি মাংস ও ডিম উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ১২৩ কোটি টাকা। এছাড়া, পোল্ট্রির গুণগতমান বাড়াতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী সভায় অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট।
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান ২ দশমিক ৪ শতাংশ। লাভজনক, টেকসই এবং পরিবেশ বান্ধব পোল্ট্রি প্রযুক্তি কৃষি পদ্ধতির উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও ব্যবহারের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা তথা আমিষের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অধিক জনসংখ্যা, ক্ষরা, বন্যা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কম, নিরক্ষরতা, গ্রামীণ দরিদ্রতা ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এদেশে প্রাণীসম্পদ ও পোল্ট্রির উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (এফও) এর তথ্য মতে গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীদের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নে প্রাণিসম্পদের অবদান প্রায় ৭০ শতাংশ। তাই, প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি নয় এটা সমাজের হতদরিদ্র মানুষের বাঁচার জন্য আশার আলো হিসেবে কাজ করছে এবং সে সাথে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের অন্যতম খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এদেশের মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই হাঁস-মুরগি লালন-পালন করে আসছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে হাঁস-মুরগি পালনের এই পেশাটি ক্রমাগতভাবে পরিবর্তন হয়ে বাণিজ্যিক বা শিল্পের আকার ধারণ করেছে। এদেশে ২৩ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন গরু, ১ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন মহিষ, ২৫ দশমিক ৯৩ মিলিয়ন ছাগল, ৩ দশমিক ৪০ মিলিয়ন ভেড়া এবং ৩২৯ দশমিক ২ মিলিয়ন হাঁস-মুরগি রয়েছে। জিডিপিতে প্রাণিসম্পদের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে প্রতি বছর বেড়ে চলেছে। যার ফলে গত এক দশকে দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন যথাক্রমে ৪২ দশমিক ৫, ১৪২ দশমিক ৩ এবং ১০৬ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।
উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে একজন মানুষ বছরে ২৪০টি ডিম খেয়ে থাকে। পুষ্টিবিদগণের মতে একজন সুস্থ মানুষকে বছরে কমপক্ষে ১৮০টি ডিম খেতে হবে। এদেশে একজন মানুষ সারা বছর খেতে পারে মাত্র ৯৫টি ডিম যেখানে বছরে জনপ্রতি কমপক্ষে খাওয়া উচিত ১০৪টি। অপরদিকে একজন মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংস গ্রহণ প্রয়োজন সেখানে প্রাপ্যতা ১০২ দশমিক ৬০ গ্রাম যার প্রায় ৫৫ শতাংশ পোল্ট্রি খাতের অবদান। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ১৫ মেট্রিক টন এবং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন। সে হিসেবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও উন্নত বিশ্বের দেশে রূপান্তরের লক্ষে আরও মাংস উৎপাদন এবং গুণগতমান আবশ্যিকভাবে বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে পোল্ট্রি গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম গুলো হচ্ছে, পোল্ট্রি প্রজাতিগুলো সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জাত উন্নয়নের জন্য গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা, নিরাপদ মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ৩৫টি, ৬ হাজার ৮০৪ জন খামারীদের পোল্ট্রি প্রযুক্তি বিষয়ক এবং গবেষকদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া, সাভার বিএলআরআই এর প্রধান কার্যালয়ের পোল্ট্রি রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও আঞ্চলিক পর্যায়ের সাব সেন্টার স্থাপন, বিজ্ঞানী, গবেষক রিসার্চ ফেলোদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশনের মাধ্যমে গবেষণা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অফিস ভবন গবেষণাগার ও গবেষণা সেড নির্মাণ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য জাকির হোসেন আকন্দ পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পোল্টির প্রজাতিগুলো সংগ্রহ, সংরক্ষণ, জাত উন্নয়ন এবং অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদনশীল জাত উদ্ভাবন, পোল্ট্রির শিল্পের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম নেওয়ার মাধ্যমে নিরাপদ মাংস ও ডিমের উৎপাদন বৃদ্ধি, ছোট মাঝারী ও বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামারীদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দেয়া, বিএলআরআই এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই ল্যাবের সঙ্গে সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। তাই প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।