ডেস্ক নিউজ
চলতি অর্থবছরে মহামারীর বিধিনিষেধের সাময়িক বিরতিতে বড় বাজারগুলোতে নতুন নতুন ক্রেতার দেখা পেয়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাত।
এর ফলে পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গত ছয় মাসে রেকর্ড ৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং কানাডায় ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ।
সম্প্রতি প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে শনিবার এ হিসাব দিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।
এ সংগঠনের নেতা ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের কর্ণধার শহিদুল্লা আজিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ছয় মাসে ইউরোপ আমেরিকার নিয়মিত ক্রেতাদের পাশাপাশি নতুন নতুন ক্রেতা এসেছে। প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি ‘ভ্যালু অ্যাডেড’ বা দামি পণ্যের অর্ডারও বেড়েছে।
“এসব নতুন ক্রেতা ও নতুন পণ্যের অর্ডার ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে।”
মহামারীর মধ্যে নতুন ক্রেতা ও পণ্যের ক্রয়াদেশ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিজিএমইএর অন্যতম সহসভাপতি আজিম বলেন, “চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিরোধ রয়েছে। চীনের কারখানাগুলোর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন উৎস হিসাবে ক্রেতারা বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে।
“এছাড়া এই সময়ের মধ্যে ভিয়েতনাম ও ভারতে লকডাউন ছিল। সেই সময়ের অর্ডারগুলো বাংলাদেশে এসেছে। এই অর্ডারগুলো ধরে রাখতে হবে। ধরে রাখতে পারলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যাব।”
তিনি বলেন, “এই সময়ের মধ্যে নতুন ক্রেতারা পণ্যের বৈচিত্র্যের দিকেও যাচ্ছে। শার্ট, ট্রাউজার, টিশার্ট, পলো শার্ট ও সোয়েটারের বাইরেও অনেক দামি পণ্যের অর্ডার এই সময়ের মধ্যে এসেছে।”
ইপিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশভিত্তিক পোশাক রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রধান বাজারগুলোতে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে আশা জাগানিয়া প্রবৃদ্ধি পেয়েছে।
যুক্ত্ররাষ্ট্রে এই সময়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেশি পোশাক রপ্তানি হয়েছে।
২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪২৩ কোটি ১৬ ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে; যেখানে আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ২৯০ কোটি ডলারের।
একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পোশাক রপ্তানি ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়েছে এই সময়ে। এ অঞ্চলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১২০০ কোটি ৭১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ৯৬৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার ছিল।
কানাডার বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
একক দেশ হিসাবে স্পেন, পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশে রপ্তানি বেড়েছে গত ছয় মাসে।
এই সময়ে অপ্রচলিত বাজারেও রপ্তানি বেড়েছে ২৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। সব মিলিয় ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে পোশাকের মোট রপ্তানি ২৮ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হয়েছিল ৫৯৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলারের পণ্য, প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরে ৫১৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল, যা ছিল আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম।
২০২২ সালের শুরুতে এখন আবার করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য নতুন শঙ্কায় পড়েছে।
২০২০ সালে মহামারী শুরুর পর এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই মাসে ধারাবাহিকভাবে পোশাক রপ্তানি কমছিল। ক্রেতারা যেসব ক্রয়াদেশ দিয়েছিলেন, তাও স্থগিত করে দিয়েছিলেন।
অগাস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে রপ্তানি কিছুটা বাড়লেও নভেম্বর ও ডিসেম্বরের দিকে তা আবার গতি হারায়।
সব মিলিয়ে মহামারীর প্রথম বছরে ২৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ পিছিয়ে গিয়েছিল রপ্তানি খাত।
অবশ্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে (জানুয়ারি ২০২১ থেকে জুন ২০২১) রপ্তানি কিছুটা বাড়তে থাকায় অর্থবছরের সামগ্রিক রপ্তানি ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নতি হয়। আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ১২ শতাংশ।
সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই থেকে ডিসেম্বরে) ১৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে রেকর্ড ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।