ডেস্ক নিউজ
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি করোনাভাইরাস। জিটুপি পদ্ধতিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রায় ৯০ লাখ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী মানুষকে ভাতা দিতে কাজ করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে গত বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক সভায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাগ্রহীতাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ লাঘবে জিটুপি পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন থেকে ভাতার টাকা মোবাইল ফোনে পৌঁছে দিতে কাজ শুরু করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর নগদ ও বিকাশের সঙ্গে চুক্তি করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। এরপর শুরু হয় ভাতাভোগীদের মোবাইল হিসাব খোলার কাজ। হিসাব খোলার কাজে ভাতাভোগীদের দুর্ভোগ কমাতে কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী মোবাইল হিসাব খুলতে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং নগদ ও বিকাশের প্রতিনিধিরা ভাতাভোগীদের কাছে পৌঁছে যান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের জন্য কাজটি মোটেও সহজ ছিল না। কাজের শুরুতেই নানা প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরে ৫০ শতাংশ পদই শূন্য। তবে কম জনবলেও কোনো বাধা তাদের কাজের গতি থামাতে পারেনি।
এতদিন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হতো। ফলে ভাতাগ্রহীতাদের ব্যাংকে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ভাতার টাকা নিতে হতো। এতে ভাতাভোগীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। গত ১৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে সরাসরি প্রেরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় ৮৮ লাখ ৫০ হাজার জনকে ভাতা দেওয়া হবে। ভাতাভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ৪৯ লাখ বয়স্ক, ২০ লাখ ৫০ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা এবং ১৮ লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি দেওয়া হবে এক লাখ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ৫২ হাজার মানুষ, বেদে ও অনগ্রসরসহ ব্যক্তির জীবনমান উন্নয়ন করা হবে ভাতা, প্রশিক্ষণ ও উপবৃত্তির মাধ্যমে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ২৫ হাজার যুবা দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত হবেন। ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হবেন প্রায় ছয় লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ৩০ হাজার দরিদ্র মানুষ পাবেন আর্থিক সহায়তা। ৫০ হাজার অতি দরিদ্র চা শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতার টাকা প্রদান কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়ে। সরকার ঘোষিত লকডাউন ও চলাচলে বিধিনিষেধের ফলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজ করতে বেশ বেগ পেতে হয়। এ অবস্থায় গত ২৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা ও ভাতা বিতরণ কার্যক্রমকে জরুরি সেবার আওতাভুক্ত ঘোষণা করে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রধান কার্যালয়সহ মাঠপর্যায়ের কার্যালয় শুক্র ও শনিবার খোলা রাখার আদেশ জারি করে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাতাভোগীর হাতে ভাতার অর্থ পৌঁছে দিতে দিন-রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও নির্ধারিত সময়ের আগেই গত অর্থবছরে ৭৯ লাখ মানুষের মধ্যে সফলভাবে ভাতা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তর ত্রাণ সহায়তা নিয়ে দুস্থ-অসহায় কর্মহীন নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। নগদ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে প্রায় তিন লাখ মানুষের হাতে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা বিতরণ কার্যক্রমের সার্বিক অগ্রগতির বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তর এতদিন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে ভাতার টাকা দিয়ে আসছিল। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১২ লাখ এবং এমএফএসে ৩৫ লাখ ভাতাভোগীর অর্থ এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যেই সব ভাতাভোগীর টাকা হাতের মুঠোয় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কোনো ধরনের প্রণোদনা ছাড়াই অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনা দুর্যোগের মধ্যেও রাত-দিন নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।