ডেস্ক নিউজ
বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে আগেরবারের চেয়ে অন্তত ৩৮ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। সাময়িক হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ১৪ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২১–২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। এটি সাময়িক হিসাব। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতি মাসের ভ্যাটের রিটার্ন জমা দেবে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো। ভ্যাটের রিটার্ন পাওয়া গেলে আরও দুই–আড়াই হাজার কোটি টাকার বাড়তি রাজস্ব যোগ হতে পারে।
এছাড়া বেশ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কয়েক হাজার কোটি টাকার কর পাওনা আছে এনবিআরের শুল্ক বিভাগের। বকেয়া কর থেকে একাংশ পাওয়া গেলে চূড়ান্ত হিসাবে বিদায়ী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ এই প্রথম তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২০–২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছিলেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, গত অর্থবছরে রাজস্ব আদায় তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদিও তিন লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে আরও লাগবে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত মে পর্যন্ত এনবিআরের তিন বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮৭.৩৪ শতাংশ লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যার মধ্যে কাস্টমস বিভাগ থেকে ৯২.৩৫ শতাংশ, আয়করে ৯০.০৩ শতাংশ এবং ভ্যাট বিভাগ থেকে ৮১.৪৯ শতাংশ রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি একদিকে ধন্যবাদ পেতে পারে, অন্যদিকে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ অনেক বেশি। প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, বিদায়ী অর্থবছরে এনবিআরকে আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক—এই তিন খাত মিলিয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল। এই হিসাবে সাময়িক রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাময়িক হিসাবে, গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস রেকর্ড পরিমাণ ৫৯ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা আদায় করেছে। দেশের আরেক বৃহত্তম কাস্টম হাউস বেনাপোল বিদায়ী অর্থবছরে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি টাকার শুল্ক–কর আদায় করেছে। সবচেয়ে বেশি ভ্যাট আদায় করে থাকে ভ্যাট বিভাগের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)। এই সংস্থাটি প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মতো আদায় করেছে। আর আয়কর বিভাগের মধ্যে এলটিইউ (আয়কর) আদায় করেছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরের মে পর্যন্ত এনবিআরের তিন বিভাগ আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগে নির্ধারিত ২ লাখ ৮৬ হাজার ৯১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৬০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এনবিআরের পরিসংখ্যান ও গবেষণা বিভাগের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আমদানি বৃদ্ধির প্রভাব পাওয়া গেছে আমদানি-রফতানি খাতে। ১১ মাসে এই খাতে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। তারপরও এই খাতে ৬ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে।
অন্যদিকে গত অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯২ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১১ মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৬ কোটি টাকা।
আর আয়কর ও ভ্রমণ খাতে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এই খাতে ৮৫ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।