নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অর্জিত হয়েছে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে প্রথমবারের মতো ভারতের বাজারে বাংলাদেশের বার্ষিক রফতানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এটি একটি রেকর্ড হলেও এখনও দুই দেশের মধ্যে ৭৭৫ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি বিদ্যমান। এই বিপুল পরিমাণ ঘাটতি থাকার পরও ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের একশ’ কোটি ডলার রফতানিতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা সাফটার শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য ভারতীয় বিশেষজ্ঞরাই বাংলাদেশেী পণ্যের ওপর নতুন করে কোন শুল্ক আরোপের প্রশ্ন নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ভারতের শিল্প মহল চাইলেও বাংলাদেশের ডিউটি ফ্রি এ্যাকসেস বন্ধ করা যাবে না। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রফতানি আরও বাড়বে, এটা ধরে নিয়েই ভারতীয় নির্মাতাদের নিজেদের স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে হবে। আর সেখানে সম্ভবত ভারত সরকারের বিশেষ কিছু করণীয়ও নেই।
ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত ১০৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। যা বাংলাদেশের জন্য শুধু একটি মাইলফলক অর্জনই নয়, রেকর্ডও বটে। ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আছে পৃথিবীর প্রায় ৬৭টি স্বল্পোন্নত দেশের, তার মধ্যে এ্যাঙ্গোলা বা মোজাম্বিক ছাড়া কখনও কোন দেশ থেকে বার্ষিক রফতানি ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। এই প্রথম বাংলাদেশের রফতানি ভারতের বাজারে এক বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ সেই বিরল তালিকায় ঢুকে পড়েছে মূলত তৈরি পোশাক রফতানিতে ভর করেই, গত অর্থবছরে যার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৮২ শতাংশ।
অবশ্য বাংলাদেশের রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসেবে অবশ্য গত এপ্রিল মাস শেষেই ভারতের বাজার বাংলাদেশের রফতানি ১০০ কোটি ডলার অতিক্রম করেছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ভারতে ১০৭ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ শতাংশ বেশি। এতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, কানাডার পরই বাংলাদেশের পণ্য রফতানির নবম শীর্ষ দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় ভারত।
ভারতে পোশাক রফতানি বৃদ্ধির কারণ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস শিল্প মালিকরা জানান, বিদেশী অনেক ব্র্যান্ড ভারতে বিক্রয় কেন্দ্র খুলছে। তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করছেন। তাছাড়া ভারতের যারা কাপড় উৎপাদন ও বাংলাদেশে তা সরবরাহ করেন, তাদের অনেকেই বাংলাদেশ থেকে পোশাক, বিশেষ করে শার্ট তৈরি করে নিচ্ছেন। এসব কারণে রফতানি বাড়ছে ভারতে।
বাংলাদেশ আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী। দক্ষিণ এশিয়ায় যে ভারত নিজেকে নেতার ভূমিকায় দেখতে চায় সত্যিই কি তারা সেখানে বাংলাদেশকে ট্যাক্স করতে পারবে? ফলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রফতানি, বিশেষ করে গার্মেন্ট, আরও বাড়বে এটা ধরে নিয়েই ভারতীয় নির্মাতাদের নিজেদের স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। আর সেখানে সম্ভবত ভারত সরকারের বিশেষ কিছু করণীয়ও নেই।