প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের থেকে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে একেকজনকে শুধু একটি করে প্রকল্পের পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাখা নিশ্চিত করতে সকল সচিব ও বিভাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির পর থেকে একজন কর্মকর্তা কিছুতেই আর একাধিক প্রকল্পের পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। গত দুই বছরে পরিকল্পনামন্ত্রী বিভিন্ন সভায় এক কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব পালন না করার নির্দেশ দেন। তা কার্যকর করেনি অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। গত ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক শামীম আহম্মেদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এবার সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে এবার কঠোর হচ্ছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
একাধিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে জানতে পেয়েছেন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তুষার কান্তি সাহা একাই ছয়টি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্ব পালন করছেন। তখন ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানতে চান, কীভাবে তিনি ছয়টি প্রকল্পের পিডি হলেন? জবাবে তুষার কান্তি সাহা বলেন, প্রকল্পের সংখ্যা বেশি, ওপর থেকে যেভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই করছি স্যার।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ইতিমধ্যে একজন কর্মকর্তাকে ৫০ কোটির বেশি টাকা বরাদ্দ এ ধরনের কেবল একটি প্রকল্পে পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছে। একাধিক প্রকল্পে কিছুতেই একজন কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ করা যাবে না বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, একজন কর্মকর্তার ১০টি, ১৪টি প্রকল্পের দায়িত্ব পালনকে প্রধানমন্ত্রী ‘ভয়াবহ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি আছেন, তাঁদের অতিরিক্ত প্রকল্পের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী, সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে একেকজনকে শুধু একটি করে প্রকল্পের পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে রাখা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে একজন কর্মকর্তাকে পিডি নিয়োগ দিয়ে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করতে হবে। সব মন্ত্রণালয় থেকে হালনাগাদ তথ্য পাওয়ার পর একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রকল্প পরিচালক হওয়াতে যে চাপ, পিডি না হওয়াতেও সমান চাপ। বেশি প্রকল্পে দায়িত্ব পালনকে অতিরিক্ত চাপ মনে হয় না। সৈয়দ আসলাম আলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, সওজ, খুলনা অঞ্চল। ৫০ কোটির বেশি টাকার কোনো প্রকল্পে একজন পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের পিডি না করার বিষয়টিও স্পষ্ট করে বলা আছে। ২০০৮ সালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতিসংক্রান্ত পরিপত্রের ১৬.৩৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি হলে একজন পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে। একই সঙ্গে পিডিকে হতে হবে অভিজ্ঞ ও যোগ্য। একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের পিডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেই নির্দেশনা বছরের পর বছর ধরে উপেক্ষিত হয়ে আসছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন কর্মকর্তাকে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব দিলে তিনি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। তখন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এতে প্রকল্পের খরচ বাড়ে। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজও শেষ হয় না।
এদিকে সওজ অধিদপ্তরের আরেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ নুরুজ্জামানকে জানান, বিভাগীয় শহরে অনেক প্রকল্প থাকে, যেখানে একজন কর্মকর্তাকে পিডির দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য আলাদা পিডি নিয়োগ দিলে সরকারের বাড়তি টাকা খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠিতে আরো বলা হয়, এটা প্রমাণিত যে একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চলমান প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চিঠিতে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের একজন কর্মকর্তা একই সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৪টি প্রকল্পে পিডির দায়িত্ব পালন করছেন। ওই মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা ১৩টি করে এবং পাঁচজন কর্মকর্তা ১০টি বা ততোধিক প্রকল্পে পিডির দায়িত্বে রয়েছেন। শুধু সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগেই নয়, স্থানীয় সরকার বিভাগেও একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে ৩৮ জন কর্মকর্তা দুই বা ততোধিক প্রকল্পে, ১৪ জন কর্মকর্তা ৩ থেকে ছয়টি প্রকল্পে পিডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়েও একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পে নিয়োজিত। এ ছাড়া পানিসম্পদ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে রাজধানী উন্নয়ন কৃর্তপক্ষ ( রাজউক) কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিএডিসির প্রকল্প গুলোতে একজন কর্মকর্তা একাধিক প্রকল্পের পরিচালক পদে রয়েছেন। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী ১০টি প্রকল্পে পিডির দায়িত্ব পালন করছেন। রাজউকে প্রধান প্রকৌশলী (প্রজেক্ট এ্যান্ড ডিজাইন) এ.এস.এম রায়হানুল ফেরদৌস, প্রধান প্রকৌশলী উজ্জল মল্কি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আমিনুর রহমান একাধিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।