ডেস্ক নিউজ
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোয় বাস করেন উৎফুল্ল উপকারভোগীরা। তারা এ ঘরগুলোকে ‘স্বপ্নের ঘর’ আখ্যায়িত করছেন। তাদের মতে, ভিটাবাড়িশূন্য মানুষের জন্য বিষয়টি স্বপ্নের মতো। তবে কিছু ঘরে বিদ্যুৎ ও পানি না থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক উপকারভোগী। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিগগিরই নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। কুলাউড়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট ২১০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৪২টি ঘর উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। অন্যের ঘরে আশ্রিত মানুষগুলো এখন নিজের ঘরে বাস করার সুযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলার তুলনায় কুলাউড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ঘরে এখন পর্যন্ত কোনো অনিয়ম বা সমস্যা দেখা যায়নি। সরেজমিন ঘুরে কোথাও ঘরে ফাটল কিংবা মেঝের সিমেন্ট উঠে যাওয়ার মতো ঘটনা পরিলক্ষিত হয়নি। এমনকি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত স্থান নির্ধারণে বেশ রুচির পরিচয় দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সড়কের পাশ ঘেরা এসব ঘরে বসবাস করে উপকারভোগীরা উদ্বেলিত ও উচ্ছ্বসিত। সোমবার দুপুরে সরেজমিন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলী, জয়চ-ী ইউনিয়নের উত্তর কুলাউড়া (পুশাইনগর), ভাটেরা ইউনিয়নের কড়ইতলা ও ইসলামনগর ঘুরে দেখা যায় ঘরগুলোয় ব্যবহার করা হয়েছে সবুজ ও লাল রঙের টিন। দুই কক্ষবিশিষ্ট এসব বাড়িতে রয়েছে একটি রান্নাঘর, শৌচাগার ও স্টোর রুম। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া স্বপ্নের বাড়িতে ইতিমধ্যে উপকারভোগী যারা উঠেছেন তারা তাদের সন্তানাদি নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ শোভাবর্ধনের জন্য ঘরের আঙিনায় লাগিয়েছেন ফুল ও ফলের গাছ। ঘরঘেঁষে তৈরি করছেন আলাদা আরও প্রয়োজনীয় গুদামঘর। সবাই খুব উৎফুল্ল, আনন্দিত। ১০ জুলাই জয়চ-ী ও কর্মধা ইউনিয়নে প্রকল্পের ঘরের কাজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মল্লিকা দে। ১৯ জুন কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলী এলাকায় প্রকল্পের ঘর পরিদর্শনে এসে কাজের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-২ আবু জাফর রাজু। এ সময় তিনি স্থানীয় উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ এলাকায় নির্মিত ঘরে উপকারভোগী হেলাল মিয়া (৪১), ফখরুল আলম (৩৭), ফয়জুন বেগম (৪৬), আজিরুন বেগমদের (৪৫) প্রত্যেকেই পরিবারের একাধিক সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন। তারা জানিয়েছেন, ঘর পেয়ে তারা আনন্দিত। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জয়চ-ী ইউনিয়নের উত্তর কুলাউড়ায় তৈরি ঘরে বাস করছেন গৌরী দাস (৪০), সবজান বিবি (৫৫), নির্মল দাস (৬০), নিপালী রানী দাস (৩২)। তারাও ঘর পেয়ে সন্তুষ্ট।
ভাটেরার কড়ইতলায় নির্মিত উপহারের ঘরে বাস করছেন গোলাপ মিয়া (৭০), জাবেদ মিয়া (৩৮), ফিরুজ মিয়া (৪৫) ও রীনা বেগম (৫০)। তারা নিজেদের বসবাস-উপযোগী করে ঘর গোছাচ্ছেন। তাদের চোখেমুখে তৃপ্তি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক তালিকাভুক্ত ৪৪০ ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ পাকা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। প্রথম পর্যায়ে ১১০টি ভূমিহীন পরিবার পেয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এ উপহার। প্রতিটি ঘরের খরচ ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, প্রথম পর্যায়ের ১১০টি ঘরের নির্মাণকাজ শেষে ইতিমধ্যে উপকারভোগীদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১০০ ঘরের মধ্যে ৪২টির কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর কাজ চলমান ।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিয়াউর রহমান ঘরগুলোকে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হবে জানিয়ে বলেন, ‘শিগগিরই ঘরগুলোয় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।’
পানির বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুহসিন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোয় গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে ইতিমধ্যে যেসব ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে, বেশির ভাগ ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যেসব ঘরে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা এখনো হয়নি সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য উভয় বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তা দ্রুত কার্যকরের চেষ্টা করছি।’