ডেস্ক নিউজ
গুরুত্বপূর্ণ ও বহুমাত্রিক ফ্রান্স সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আমন্ত্রণে ৯ থেকে ১৩ নভেম্বর প্যারিস সফর করবেন তিনি। দুই দেশের অংশীদারিত্বের সম্পর্ককে কৌশলগত (স্ট্র্যাটেজিক) স্তরে নিয়ে যাওয়ার যাত্রা শুরু হতে পারে এই সফরে।
ঢাকা যেমন প্যারিসের মতো বড় একটি শক্তিকে উন্নয়ন অভিযাত্রায় পাশে চায়, তেমনি ফ্রান্সও ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিক্রি করতে আগ্রহী। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি নিরাপত্তা খাতে একটি লেটার অফ ইনটেন্ট স্বাক্ষর হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
এই সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ ও প্রধানমন্ত্রী জাঁ ক্যাস্টেক্সের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পাশাপাশি বৃহৎ ব্যবসায়িক অ্যাসোসিয়েশন ও গ্রুপের সঙ্গেও বৈঠকের কথা আছে প্রধানমন্ত্রীর। একইসঙ্গে ইউনেস্কোর ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও প্রথম ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ নিজ হাতে বিজয়ীদের হাতে তুলে দিতে পারেন তিনি। এ ছাড়া এ সময় তিনবার গার্ড অফ অনারও দেওয়া হবে শেখ হাসিনাকে।
এর আগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এলিসি প্রাসাদে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল।
বাংলাদেশ কী চায়
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ তার বড় রফতানি বাজার ফ্রান্সের সঙ্গে বাণিজ্য অব্যাহত রাখতে চায়। একইসঙ্গে বিনিয়োগ, সুলভমূল্যে ফরাসি পণ্য আমদানি ও ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংগ্রহের উৎস বহুমুখী করতে চায়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমাদের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার ও উন্নয়ন সহযোগী ফ্রান্স।’
ফ্রান্স কী চায়
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সেটারই সুবিধা নিতে চায় ফ্রান্স। আবার সামরিক পণ্য বিক্রয়েও আগ্রহ রয়েছে ফ্রান্সের। রাফাল যুদ্ধবিমান, প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ, রাডার, সিমুলেটর, ই-ভিসা, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রয়েই দেশটির আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাসের ওয়েবসাইট অনুযায়ী ২০২০ সালে প্রথমবার ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলে ও বিমানবাহিনী বাহিনী প্রধান ফিলিপে লাভিগনে ঢাকা সফর করেন।
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ফ্রান্স এবং দেশটি সমরাস্ত্র তৈরিতে অভিজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আছে এবং ফোর্সেস গোল ২০৩০’তে আগ্রহ আছে ফ্রান্সের।
এয়ারবাস, থ্যালেসের সঙ্গে বৈঠক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন ইউরোপের সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী সংস্থা এয়ারবাসের প্রধান। স্যাটেলাইট, রাডারসহ বিভিন্ন উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান থ্যালেসের প্রধানও দেখা করতে চেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িংয়ের কাছ থেকে কয়েকটি উড়োজাহাজ কেনার পরই অনেকগুলো কোম্পানি বাংলাদেশের কাছে উড়োজাহাজ বিক্রি করতে চায়। এয়ারবাস তাদের মধ্যে একটি।
অন্যদিকে থ্যালেস বাংলাদেশে সামরিক ও বেসামরিক রাডার বিক্রি করছে।
কেন এই সফর গুরুত্বপূর্ণ
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের বেশ কয়েকবার দ্বিপক্ষীয় ও বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ফ্রান্সের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
তিনি বলেন, সফরটি বহুমাত্রিক এবং কৌশলগত সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
ইন্দো-প্যাসিফিকে নিজেদের উপস্থিতি আরও বড় আকারে দেখতে চায় ফ্রান্স এবং এ অঞ্চলের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশকেই তারা পাশে চাইবে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, এ মূহূর্তে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ার বাংলাদেশ। যা আমাদের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি আছে। এ সফরের মাধ্যমে ওই বিষয়ে উভয়পক্ষ একে-অপরের মতামত জানার সুযোগ পাবে। এমনটাই মনে করছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব।
তিনি আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ অন্যতম ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এবং ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য নায্যতার প্রশ্নে সবসময় সমর্থন দিয়েছে ফ্রান্স। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতেও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদসহ বিভিন্ন ফোরামে ঢাকাকে সমর্থন দিয়ে আসছে প্যারিস।