ডেস্ক নিউজ
২০১৯-২০ অর্থবছরে অভিবাসীদের এবং প্রত্যাবর্তনকারীদের পুনর্বাসন বাবদ ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। আর গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ৪২৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে ২১ হাজার ৬০০ জনের মধ্যে। সর্বমোট ঋণের ৯২৫ কোটি টাকার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫১৫ কোটি টাকা আদায় করা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদুল হক।
সম্প্রতি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৫তম বৈঠকের কার্য বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
এর আগে কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক হতে কোন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কীভাবে ও কোন ক্যাটাগরিতে ঋণ দেওয়া হয়, যেকোনো ব্রাঞ্চ থেকে টাকা তোলা ও পাঠানোসহ ঋণের অর্থ ঠিকমতো পুনরুদ্ধার হচ্ছে কি না এবং প্রসেসিং ফি’র হার ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চান। এর জবাবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসব তথ্য জানান।
জাহিদুল হক জানান, অভিবাসীরা ফিরে আসার পর তাদের পুনর্বাসন এবং সাধারণ জনগণের জন্য প্রথমে তাদের ঋণের প্রকল্প প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি, আকার ও সম্ভাব্য সুদ এবং ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা প্রভৃতি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ প্রদান ও পরিশোধের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। কিস্তিসমূহ ইএমআই (সমহারে মাসিক কিস্তি) পদ্ধতিতে চার্জ করা হচ্ছে। ঋণের প্রসেসিং ফি ৩ শতাংশ হতে কমিয়ে দশমিক ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। দেশে ৮৯টি ব্রাঞ্চের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে যা ২০২২ নালের মধ্যে ১০০ তে উন্নিত করা হবে। বিশ্বজুড়ে ১৮টি একচেঞ্জ হাউসের সাথে নিজস্ব এজেন্সি ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে দেশের ব্রাঞ্চসমুহে টাকা পাঠাতে পারবে।
তিনি জানান, সব ঋণ (কর্মচারী ঋণ ব্যতীত) তিন লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন করা হয়েছে। ৩ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত স্বল্প জামানত এবং ৫ লাখ টাকার উপরে জামানতসহ ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। পুনর্বাসন ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৮ লাখ টাকা হতে ৫০ লাখ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু অভিবাসী বৃহৎ পরিবার ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ১০ লাখ টাকা হতে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার মেয়াদ সর্বোচ্চ ১০ বছর করা হয়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২০২০ সালে এ ব্যাংকে অপারেটিং মুনাফা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা, নিট মুনাফা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। ব্যাংকের Data Center and Data Recovery Services স্থাপনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফিরে আসা নারী উদ্যেক্তাদের জন্য গ্রাম এলাকায় আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ৪ শতাংশ হার সুদে দুটি ঋণ স্কিম কার্যক্রম চালু হতে যাচ্ছে।
৭২ লাখ ৭০ হাজার প্রবাসীকে দেওয়া হয়েছে স্মার্টকার্ড
কমিটির সদস্য মৃনাল কান্তি দাস এমপি করোনাকালে বিদেশে যারা চাকরি হারিয়েছেন অথবা জীবনমানে অগ্রসর হতে চান তাদের নিরূপণ করে আর্থিকভাবে সহায়তাকল্পে প্রবাসী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিশেষ ভূমিকা লাখার অনুরোধ করেন।
তিনি জানান, প্রবাসীদের মাধ্যমে বছরে দুই লাখ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আসছে, অথচ তাদের এনআইডি, স্মার্টকার্ড অথবা ই-পাসপোর্টে বানান ভুলসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সমাধান করতে হয়রানির শিকার হতে হয়, যা প্রতিদিনই পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বশিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত হওয়ায় তাদের পক্ষে এগুলো সংশোধন করা সম্ভব হয় না। তিনি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের মনোযোগের সঙ্গে দায়িত্ব নিয়ে কর্ম সম্পাদন ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
তিনি দেশের এয়ারপোর্টের দুর্বল ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে প্রবাস থেকে কিছু নিয়ে আসলে বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিন্ডিকেট দ্বারা মারাত্মক হয়রানির শিকার হতে হয়। এগুলো বন্ধে তিনি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুপারিশ করেন।
এর জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ১ কোটি ২০ লাখ লোক প্রবাসে রয়েছেন। যার মধ্যে নির্দিষ্ট ফি’র মাধ্যমে ৭২ লাখ ৭০ হাজার জনকে স্মার্টকার্ড দেওয়া হয়েছে এবং কল্যাণ বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে। অবশিষ্টদেরও এ কার্ডের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোয়ালিটি সম্পন্ন মাইগ্রেশন পাঠানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সদস্যদের করোনা টেস্টের জন্য ১ হাজার ৬০০ টাকা প্রদানসহ যাবতীয় সুবিধা বহন করা হচ্ছে ।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, বিদেশে যেসব প্রবাসী শ্রমিক বা চাকরিরত থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী রয়েছেন তাদের আর্থিক প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক কর্তৃক লোন দিতে পারলে সেখানে তারা উন্নত জীবন যাত্রায় যেতে পারবেন এবং এটি দেশের অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তিনি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিদেশে যেতে আরবি ভাষা বেশি শিখছেন
বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর নিয়ন্ত্রণাধীন ৬টি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি) ও ৬৪টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) মাধ্যমে বিভিন্ন পেশায় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি অধিক সংখ্যক কর্মী গমনকারী দেশের ভাষা শেখানো হয়। এছাড়া ২০১২ সাল হতে প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
বৈঠকে বিএমইটির আওতাধীন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহ হতে ২০০৯ সাল হতে ২০২১ এর নভেম্বর পর্যন্ত কতজন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তা তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে উত্থাপিত কার্যপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর আওতায় বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য যাওয়া ভাষা শিক্ষা গ্রহণকারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আরবি ভাষায় শিক্ষা নিয়েছেন।
বিএমইটির আওতায় জাপানি, কোরিয়ান, ইংরেজি, চাইনিজ (মান্দারিন), হাউজকিপিং অ্যান্ড ক্যান্টারিজ (চাইনিজ) ও আরবি শেখানো হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষা নিয়েছেন আরবি ভাষায়। হাউসকিপিং কোর্সের অংশ হিসেবে আরবি ভাষার ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আর এতে বেশিরভাগ নারীরা অংশ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন।
আরবি ভাষায় এ পর্যন্ত ৪৮ লাখ ৫ হাজার ৪৪৪ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। অন্যদিকে জাপানি ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২ হাজার ৮৮৫ জন। কোরিয়ান ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ৩ হাজার ৭৯ জন। ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মাত্র ১ হাজার ৭৫৭ জন। চাইনিজ (ম্যান্ডারিন) ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মাত্র ৯ জন। আর হাউজকিপিং অ্যান্ড ক্যান্টারিজ (চাইনিজ) ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২ হাজার ৫৫২ জন।
আর দক্ষতা উন্নয়ন, হাউজকিপিংসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মোট ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৫১৮ জন।