ডেস্ক নিউজ
বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল আউটলুকে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশ হবে বিশ্বসেরা। বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও অগ্রগতি ধরে রাখবে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধু ভারত বাংলাদেশকে পেছনে ফেললেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে গোটা বিশ্বকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ।
বিশ্বব্যাংক গতকাল ওয়াশিংটন থেকে এই গ্লোবাল আউটলুক প্রকাশ করেছে। আউটলুকে নতুন বছরের প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির ঝুঁকির কথাও বলেছে বিশ্বব্যাংক। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, করোনা সংকটের কারণেই শিল্প-কারখানায় ব্যাপক ক্ষতিসহ অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন।
উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতি বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল এবং আরও ভঙ্গুর হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। অনেক দেশে ভ্যাকসিনেশন অগ্রগতির মন্দাভাব দেখা দিয়েছে। এসবের ফলে বাড়ছে করোনা সংকট। যার প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির হার কমবে উল্লেখ করে এই আউটলুকে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার কমে হবে ৬ শতাংশ। অথচ ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন করা হয় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের অর্জন হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, পরের বছরের অর্জন হতে পারে ৪ শতাংশ। ফলে ২০২৩ সালে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ বাংলাদেশ। আউটলুকে আরও বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ হবে। ইউরোপেও বিপর্যয় হবে প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে। চলতি অর্থবছরে ইউরোপের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ শতাংশ। এর পরের অর্থবছরে হবে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার কমবে জাপানেও। মূলত ওমিক্রনের কারণেই এমন শঙ্কা। ২০২১-২২ অর্থবছরে জাপানের প্রবৃদ্ধি হবে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার হবে ১ দশমিক ২ শতাংশ। এতে উল্লেখ করা হয়-
উন্নয়নশীল দেশে বিপর্যয় : ওমিক্রনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে। এই বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশের আশপাশে ভারত ছাড়া কোনো দেশ নেই। প্রবৃদ্ধি অর্জনে চীন, পাকিস্তান, সৌদি আরবসহ নানা দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।
পূর্ব এশিয়ায় চীন সেরা : তবে করোনা সংকটেও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখবে পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ, ২০২২ সালে যা প্রাক্কলন করা হয় ৫ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এই অঞ্চলে চীন সেরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। চলতি অর্থবছরে ইন্দোনেশিয়া ৫ দশমিক ২ ও পরের বছর ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। চলতি অর্থবছরে থাইল্যান্ড ৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং পরের বছর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
ইউরোপের সেরা পোল্যান্ড : চলতি অর্থবছরে ইউরোপের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে হবে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। তবে প্রবৃদ্ধি অর্জনে ইউরোপের সেরা হবে পোল্যান্ড। চলতি অর্থবছরে পোল্যান্ডের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে হবে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৪ শতাংশ, এর পরের অর্থবছরে হবে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ। একই সময়ে তুরস্ক ২ শতাংশ ও পরের বছর ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
মন্দের ভালো মেক্সিকো : ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো চলতি বছরের ২ দশমিক ৬ এবং পরের বছর ২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। দেশগুলোতে মন্দের ভালো মেক্সিকো। চলতি অর্থবছরে দেশটি ৩ শতাংশ এবং পরের বছর ২ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্রাজিলের প্রবৃদ্ধির হার হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে আর্জেন্টিনা ২ দশমিক ৬ ও পরবর্তী অর্থবছরে ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সেরা মিসর : মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চলতি অর্থবছরে ৪ দশমিক ৪ ও পরের অর্থবছরে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। একই সময়ে প্রবৃদ্ধির হার বেশি হবে মিসরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, পরের বছরেও একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে দেশটি। চলতি অর্থবছরে সৌদি আরবের প্রবৃদ্ধির হার হবে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, পরবর্তী অর্থবছরে হবে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ইরানের প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ৪ শতাংশ, পরবর্তী অর্থবছরে হবে ২ দশমিক ২ শতাংশ।
সাব-সাহারান আফ্রিকা : চলতি অর্থবছরে এই অঞ্চলে গড় প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, পরবর্তী অর্থবছরে হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এসব অঞ্চলে নাইজেরিয়া সেরা, দেশটি ২ দশমিক ৫ ও ২ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। চলতি অর্থবছরে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ১ শতাংশ, পরবর্তী অর্থবছরে হবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।